‘মনে হচ্ছে না এরশাদ আটক’

নাটকীয় এক ঘোষণায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে র‌্যাবের পাহারায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে হাসপাতালে যাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Dec 2013, 05:53 PM
Updated : 12 Dec 2013, 11:59 PM

যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আকস্মিকভাবে বারিধারার বাড়ি থেকে এরশাদের র‌্যাব পাহারায় বাইরে যাওয়া সব মহলে কৌতূহলের সৃষ্টি করে।

এরশাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ার পর জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার দলের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তবে তা অস্বীকার করে কয়েক মিনিটের মধ্যে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান অসুস্থ বোধ করার পর তার বাড়ির সামনে প্রহরারত সদস্যদের জানালে তাকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়।”

এরপর রাত সোয়া ২টায় গুলশানে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন,  এরশাদ সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হলেই বাসায় ফিরবেন।

এরশাদের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তাকে আটক করা হয়েছে বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়নি।”

তবে ঘটনার সময় এরশাদের বারিধারায় বাড়িতে থাকা জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের এক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এরশাদকে আটকই করা হয়েছে এবং ওই সময় ধস্তাধস্তিও হয়েছে।

এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে হাওলাদার বলেন, “আমি রাতে দীর্ঘক্ষণ তার (এরশাদ) বাসায় ছিলাম। আরো অনেকেই ছিল। এরপর আমি  চলে আসি।

বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণ পর এরশাদের ‘অসুস্থতার’ খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান বলে জাপা মহাসচিব জানান।

“হাসপাতালে তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ।”

কী অসুখ- জানতে চাইলে হাওলাদার বলেন, “এটা ডাক্তাররা ভাল বলতে পারবেন। আমি আপনাদের একটা কথা বলতে চাই, তাকে আটক করা হয়নি।”

স্ত্রী সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্নাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা হাওলাদারকে এই সময় বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

র‌্যাবের উপস্থিতির বিষয়ে হাওলাদার বলেন, “উনি সেনাপ্রধান ছিলেন, রাষ্ট্রপতি ছিলেন। সব সময়ই প্রটোকল পেয়ে আসছেন। আজো প্রটোকল নিয়ে সিএমএইচে গেছেন।

“অন্য সময় প্রটোকল পেয়েছেন, আজো প্রটোকল পেলে ক্ষতি কী?”

এদিকে এরশাদের বাড়িতে থাকা জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতা ফয়সাল আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরাবিভ্ন্নি অঙ্গ সংগঠনের প্রায় ১০০ নেতাকর্মী প্রেসিডেন্ট পার্কে ছিলাম। রাত ১১টার পর পেছনের গেইট দিয়ে অতর্কিতে র‌্যাব-পুলিশ মিলিয়ে ৫০-৬০ জন ঢুকে পড়ে এবং চেয়ারম্যান স্যারকে তুলে নিয়ে যায়।”

এরশাদকে নিয়ে যাওয়ার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

জাপা চেয়ারম্যানের রাজনীনৈতিক ও প্রেসসচিব সুনীল শুভরায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ঘটনার কিছুই তিনি জানতেন না।

“বাসায় বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ একটি টেলিভিশন চ্যানেলে স্ক্রল দেখলাম, চেয়ারম্যান স্যার আটক হয়েছেন। আমি প্রেসিডেন্ট পার্কে ছুটলাম। গিয়ে শুনি, চেয়ারম্যান স্যার হাসপাতালে গেছেন।”

এরশাদ ’আটক’ হওয়ার পর বেশ কয়েকবার সুনীলকে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আসলে আমি কিছু জানতাম না তো, আপনারা প্রশ্ন করলে কী উত্তর দিতাম? তাই ফোন বন্ধ রেখেছিলাম।”

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর আহমেদ সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে’ তিনি খবর পেয়েছেন যে এরশাদ এখন অবসর নেবেন এবং রওশন এরশাদ দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন।

তবে মহাসচিব হাওলাদার বলেন, “তিনি (এরশাদ) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন, এখনো চেয়ারম্যান আছেন।”

ফাইল ছবি

অসুস্থ অবস্থায় এরশাদ হাসপাতালে থাকলে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব কে পালন করবেন- এ প্রশ্নের উত্তরে হাওলাদার বলেন, “দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

এরশাদের এই ‘অসুস্থতার’ আগেই রাতে জাতীয় পার্টির একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাড়ি গণভবনে যায়, যা নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেসসচিব আসিফ কবির।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন বাবলু এবং সালমা ইসলাম গণভবনে এসেছিলেন।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রওশন এরশাদও সন্ধ্যার পর গণভবনে যান বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও আওয়ামী লীগ তাদের আশা ছাড়ছিল না। জাতীয় পার্টির জন্য ৬০টি আসন রেখেই দশম সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টন বুধবার চূড়ান্ত করে ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগ।

তফসিল ঘোষণার পর ৫ জানুয়ারির ভোটে অংশ নেয়ার জন্য ২ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এরশাদের পক্ষেও ঢাকা-১৭, লালমনিরহাট-১ ও রংপুর-৩ আসনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়।

কিন্তু এর পরদিনই এরশাদ এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, বিরোধী দল বিএনপিসহ সব দল না আসায় এবং ‘পরিবেশ না থাকায়’ জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে না।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ার পর জাতীয় পার্টির মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদেরও পদত্যাগ করতে বলেন এরশাদ। এনিয়ে তার দলের মধ্যে দফায় দফায় আলাদা বৈঠকের খবর সাংবাদিকদের কাছে এলেও বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য পরিচিত এরশাদ বলে যান, তার সিদ্ধান্ত ‘চূড়ান্ত’।