চাইলে দেয়া হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও: হাসিনা

‘সর্বদলীয়’ সরকারে যোগ দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান আবারো জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2013, 09:56 AM
Updated : 30 Nov 2013, 11:35 AM

বিরোধী দলের আন্দোলনের মধ্যে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়েই হবে এবং অসাংবিধানিক কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না।

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিরোধী জোটের দ্বিতীয় দফায় ৭২ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে সঙ্কট সমাধানে বিরোধীদলীয় নেতাকে টেলিফোন করে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমিই তাকে ফোন করলাম। আমি মনে করলাম, আমার নমনীয় হওয়া উচিত। আমি নমনীয় হয়ে ফোন করলাম। আসলে উনি (খালেদা) ইলেকশনই চান না।”

বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কতগুলো মন্ত্রণালয় চান? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব চাইলেও দিতে রাজি। আসুন নির্বাচনে আসুন।”

বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘সর্বদলীয়’ সরকার গঠন করে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে।  

নির্বাচন কমিশন আগামী ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে ইতোমধ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে। তা প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দল নির্বাচন বয়কটের পাশাপাশি তা প্রতিরোধের ঘোষণাও দিয়েছে। 

শেখ হাসিনা বলেন, “যতই চেষ্টা করুক, আল্লাহর রহমতে নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। দেশে অসাংবিধানিক ধারা চলবে না, আসতে দেব না।”

নির্দলীয় সরকারের দাবিতে কয়েক সপ্তাহে বিরতি দিয়ে হরতালের পর দুই দফায় ছয় দিন অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দল।

বিরোধী দলের কর্মসূচিতে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে মানুষ পোড়ানোর ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “উনার মানবতা বলে কিছু নেই। ক্ষমতার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছেন। একের পর এক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।

 “এই পোড়ানোর খেলা বন্ধ করেন। বাংলাদেশের মানুষ ক্ষেপলে, যারা পোড়ানোর হুকুম দিচ্ছেন, তাদের পোড়ানোর জ্বালা সহ্য করতে হবে।”

“তিনি জনগণের শান্তি চান না, অশান্তি চান। জনগণের শান্তি উনার ভালো লাগে না। অশান্তি বেগমের অশান্তিতে জনগণকে পুড়িয়ে মারছেন।”

নাশকতাকারীদের প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিতে দেশের প্রত্যেকটি এলাকায় যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে যারা রয়েছেন, তাদের তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন পারিচালককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আন্দোলন করছেন, লুকিয়ে করছেন। লোক ভাড়া করে মানুষ পোড়াচ্ছেন।

“আন্দোলন করতে হলে রাস্তায় নামেন। রাস্তায় দেখা হবে, কার কত শক্তি, দেখা যাবে।”

প্রধান বিরোধী দল যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় আন্দোলন করছে দাবি করে তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে- এজন্য বিএনপি নেত্রীর মনে খুব ‍দুঃখ।

“বিএনপি নেত্রী আদৌ স্বাধীনতা চাইতেন কি না? তার জন্ম তো বাংলাদেশে না, ভারতের শিলিগুড়ির চা বাগানে তার জন্ম। সেজন্য, দরদ নেই।”

খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ নিয়ে প্রশ্ন তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “একজন মানুষ কতবার জন্মায়? তার অনেক জন্মদিন। ’৯৩ সাল থেকে উনি ১৫ অগাস্ট জন্মদিন পালন করছেন।”

“যেদিন আমি শোকে কাতর, সেদিন তিনি ফূর্তি করেন,” ১৫ অগাস্ট ট্রাজেডি স্মরণ করে বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

হুমায়ুন আজাদ আক্রান্ত হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ঢাকা সেনানিবাসে গাড়ি থামিয়ে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

“উনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন- তখন আমার ক্যান্টনমেন্টে ঢোকা নিষেধ ছিল।”

খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, “২০০৬ সালেও তো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল। তত্ত্বাবধায়ক থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন হলো না। তারপরও উনি তত্ত্বাবধায়ক চান?”

ড. কামাল হোসেন, আকবর আলি খান, সুলতানা কামালের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এখন যারা বিবৃতি দেন, তাদের অনেকেই তো উপদেষ্টা ছিলেন।

“তারাই ২০০৬-এ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়ে পদত্যাগ করল। এই ব্যর্থ লোকগুলো আবার সবক দেয়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে।”

যুবলীগের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে ‘রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থের  মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

ইয়াসিন কবির জয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত প্রামাণ্য গ্রন্থটির ওপর আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির জন্য অবদানের জন্য রফিকুল ইসলাম, ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, গলফার সিদ্দিকুর রহমান, সাহসী নারী হিসাবে শাহানা বেগম, অস্কারবিজয়ী নাফিস বিন জাফরকে সম্মাননা দেয়া হয়।

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ভূমিমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রমুখ।