হরতাল বন্ধে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: সুরঞ্জিত

বিরোধী দলের হরতালে সহিংসতায় প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক এই কর্মসূচি নিষিদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন প্রবীণ রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2013, 06:12 PM
Updated : 7 Nov 2013, 06:12 PM

হরতালের বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর আহ্বানের তিন দিন পর বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যও বলেন, “সংসদ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে; আতঙ্কের হরতাল বন্ধ করতে হবে। ক্ষতি করলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

“এজন্য, সুপ্রিম কোর্টও চোখ বুঁজে বসে থাকবে না। অবিলম্বে হরতাল বন্ধ করতে হবে। সাংবিধানিক ধারা বজায় রাখতে হবে।”

রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে হরতাল দেশে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। সাম্প্রতিক হরতালে বোমাবাজি ও গাড়ি পোড়ানোর দিকটি তুলে ধরে মঙ্গলবার চুন্নু সংসদে বলেছিলেন, এখন হরতাল নিষিদ্ধের সময় এসেছে।

সরকারি দলের নেতাদের সমালোচনার জবাবে বিএনপি তারা ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের কথা তুলে ধরছে।

সুরঞ্জিত হরতালে সহিংসতার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ হাই কোর্টের ২৪ লাখ টাকা এবং কেরালা হাই কোর্টে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করার কথাও উল্লেখ করেন।

হরতালের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের রিট আবেদনটি গ্রহণ না করলেও বাংলাদেশের আদালত কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়।

সুরঞ্জিত বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করার আগেই আমি সংসদ সদস্যদের বলব, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

হরতালের আগের দিন ঢাকায় পুড়ছে বাস। এ ধরনের ঘটনায় হরতালের মধ্যে গাজীপুরে অগ্নিদগ্ধ হন মনির হোসেন।

সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় সুরঞ্জিতের আগে বক্তব্যে আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমদ সংঘাত ছেড়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব অনুযায়ী মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা করতে বিএনপির সম্মতির বিষয়ে তিনি বলেন, “কেন মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা চান? কেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান না?

“কারণ, বলেছিলেন ২৭ তারিখ থেকে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না। এই জন্য তার সঙ্গে বসবেন না।”

‘ক্ষতিপূরণ হরতালকারীর কাছ থেকে আদায়’

ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য হরতালকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন আইন প্রণয়নের ‘চিন্তা’ করছে বলে সংসদে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর।

গত তিন দিন ১৮ দলীয় জোটের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালে প্রাণহানি ও ভাংচুরের বিষয়ে সংসদে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেন তিনি।

হরতালের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “হরতালে সারাদেশে পিকেটারদের সঙ্গে ১৮ দলের নেতারা শারিরিকভাবে কোথাও অংশ গ্রহণ করেননি। তথাকথিত আন্দোলনের নামে তারা হঠকারিতার আশ্রয় নিয়েছেন। এটা কোনো বুদ্ধিদীপ্ত নাগরিকের পরিচয় নয়।”

‘শিক্ষার্থীদের কথা ভাবুন’

চলমান জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার মধ্যে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত চিন্তা করে আর হরতাল না দিতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

বৃহস্পতিবার তিনি সংসদে বলেন, “এখন শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে ধ্বংস করবেন না। হরতাল আর দেবেন না।”

বিরোধী দলের হরতালের কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার সারাদেশে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে বিরোধী দল ভবিষ্যতেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় উদ্বেগে রয়েছে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, বছরের শেষ সময়ে এসে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে বা বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

“৪ কোটি শিক্ষার্থীর ৮ কোটি বাবা-মা, অভিভাবক আজ উদ্বিগ্ন। শিক্ষার বিরদ্ধে বিরোধী দল দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মসূচি দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। ন্যূনতম মানবিকতাবোধ ও মূল্যবোধ থাকলে তারা (বিএনপি-জামায়াত)তা করত না।”