‘সরকারের এজেন্টরা’ বোমা হামলা চালাচ্ছে: ফখরুল

হরতালে বোমাবাজির পেছনে বিরোধী দলের আন্দোলনকে ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রিয়াজুল বাশারও ফারহান ফেরদৌসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2013, 01:03 PM
Updated : 27 Oct 2013, 01:21 PM

হরতালের আগের দিন থেকে মন্ত্রী, বিচারপতির বাড়ি এবং র‌্যাব-পুলিশের কার্যালয়ের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে বোমাবাজিতে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

৬০ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “সরকারের এজেন্টরা নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন ও গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে এই অপকর্ম (বোমাবাজি) করছে। এসব দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

একই সঙ্গে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের যানবাহনে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দল ও জোটের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হরতাল আহ্বানকারীদের মুখপাত্র ফখরুল।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শেষ হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে ৫টা ৫ মিনিটে নয়া পল্টন সড়কের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড়ে একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষা, সৌদি আরব থেকে ফেরা হাজিদের গাড়ি এবং বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের গাড়িও হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ উপেক্ষা করে রোববার থেকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ জোটের তিন দিনের হরতাল শুরু হয়েছে। হরতালের আগের দিন এবং হরতালের দিন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক বোমাবাজি হয়।

ফখরুল বলেন, “মুখে সমঝোতা ও সংলাপের কথা বললেও তাদের (সরকার) অন্তরগত স্বচ্ছতা নিয়ে আমরা সন্দিহান। বিরোধী দল দমনে সরকার আগের মতোই দুর্বিনীত ও অপরিণামদর্শী আচরণ করছে।”

অনিশ্চয়তা দূর করতে সংলাপের গুরুত্ব স্বীকার করেই তিনি বলেন, “নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার বিষয়টি আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হতে হবে। অন্যথায় সরকারের সমঝোতা ও সংলাপের আহ্বান জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হরতালের প্রথম দিনে সারাদেশে বিরোধী দলের ৬ শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। আহতের সংখ্যা ১৫শ’। ১৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১২ জনকে সাজা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল বলেন, “বরাবরের মতো আজও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং তাদের পাখনার নিচে পালিত ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিষ্ঠুর পাশবিকতায় মেতে উঠেছে। তাদের হাতে তিনজন নিহত হওয়ার খবর আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে।”

সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে সরকার ‘দ্বৈতনীতি’ অবলম্বন করছে অভিযোগ করে তা তুলে নেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

হরতালের মধ্যে বিএনপি কার্যালয়ের ফটকে বসে পত্রিকা পড়ছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।ছবি: নয়ন কুমার/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

“একদিকে সভা-সমাবেশ-মিছিল বন্ধ করা হয়েছে। অথচ সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা রাজধানীতে পুলিশের ছত্রছায়ায় মিছিল করছে। কিন্তু বিরোধী দলকে মিছিল তো দূরের কথা, কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।”

হরতালের সমালোচনা করে সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি নেতা বলেন, “আমরা গত ৫ বছরে বিভিন্ন দাবিতে ১৬ কি ১৭ দিন হরতাল করেছি। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আজ থেকে তিন দিনের হরতাল করছি।

“অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ১৯৯৫-৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। লৈগি-বৈঠা নিয়ে মানুষ হত্যা করে মৃতদেহের ওপর নৃত্য করেছিল, এসব নারকীয় ঘটনা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি।”

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মনিরুজ্জামান রেজিনকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে পুলিশ ধরে নেয়ার পর তার কোনো খবর মিলছে না বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

“আটকের পর রেজিনকে পুলিশ বলেছে, ‘তোমার সিনিয়র নেতাদের আসতে বল, তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেব’। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত রেজিনের কোনো হদিস পুলিশ দিচ্ছে না। বিষয়টি আমাদের কাছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, বেলাল আহমেদ, যুবদল নেতা আ ক ম মোজ্জম্মেল, ফরহাদ হোসেন আজাদ উপস্থিত ছিলেন।