
বাসদে ফের ভাঙন
নিজস্ব প্রতিবেদক,
Published: 12 Apr 2013 03:54 PM BdST Updated: 12 Apr 2013 06:23 PM BdST
-
সংবাদ সম্মেলনের পর নতুন বাসদের মিছিল
মতবিরোধের জের ধরে ফের ভাঙনের মুখে পড়লো বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
দলের এতোদিনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুবিনুল হায়দার চৌধুরীকে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ওই সংবাদ সম্মেলনে বাসদের সহযোগী সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সভাপতি শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, সাধারণ সম্পাদক আহসানুল হাবিব সাঈদ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সুলতানা আকতার রুবি উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা বলেন, বাসদের ২৭টি জেলার নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে রয়েছেন।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে দলের ‘আদর্শচ্যুতির’ অভিযোগ এনে কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কথাও জানান তারা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে ঐক্য, গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে দলীয় অবস্থান, দলের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা এবং বিপ্লবী রাজনীতির তাত্ত্বিক শিবদাস ঘোষকে নিয়ে মতবিরোধের কারণে দলে এ ভাঙনের কথা বেরিয়ে আসে তাদের কথায়।

"বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্যয়েও নীতিনিষ্ঠ সংগ্রামের মাধ্যমে বাসদ বাম মহলে বিশিষ্টতা অর্জন করে। কিন্তু ঘোষিত নীতিমালা থেকে প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের ক্রমাগত বিচ্যুতিতে একটা পর্যায়ে এসে দলের এই আদর্শগত ও সাংগঠনিক বিকাশ স্থবিরতার মধ্যে পড়ে।"
যৌথ জীবনের অনুশীলন না করে ব্যক্তিগত পছন্দ বা ইচ্ছার ভিত্তিতে জীবনযাপন, একক ও গোষ্ঠীগত সিদ্ধান্তে দল পরিচালনা,জবাবদিহি ও স্বচ্ছতার ঘাটতি, সমালোচনা-আত্মসমালোচনার নীতি অনুসরণ না করা এবং পার্টির সম্পদ ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় যৌথতার নিয়ম লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে ওই স্থবিরতার সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করেন মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।
এছাড়া এতোদিন দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্যে এবং দলীয় প্রকাশনায় শিবদাস ঘোষের চিন্তাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এখন তাকে ‘অজ্ঞতাপ্রসূত’ বলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীর কাছে এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।”
তিনি বলেন, “বিপ্লবী দল গড়ে তোলার নীতিগত-পদ্ধতিগত সংগ্রাম এবং বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের সংকটগুলোকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই গত কিছু দিন ধরে দুটি ভিন্নমতে দল বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যা দলের অভ্যন্তরে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা সম্ভব হয়নি।”
সিপিবির সঙ্গে ঐক্য বাসদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক পথ পরিক্রমার সঙ্গে 'সঙ্গতিপূর্ণ' নয় বলেও মনে করেন মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “তরুণ প্রজন্মের গণজাগরণকে আমরা অভাবনীয় ঘটনা মনে করি। তাদের আমরা সর্বান্তকরণে সমর্থন করি।”
"তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির সঙ্গে তাজরিন গার্মেন্টেসে শ্রমিক হত্যাসহ হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার বিচারের দাবি, জাতীয় সম্পদ গ্যাস-কয়লা রক্ষা, নারীর ওপর নির্যাতন-লাঞ্ছনা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়েও যদি তরুণরা কথা বলতো তাহলে সরকারের পক্ষে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনকে নিজেদের ফায়দা তোলার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হতো না।"
দলের এই ভাঙন নিয়ে যোগাযোগ করা হলে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় দুইজন সদস্য আলাদা হয়ে গেছেন। এই আলাদা হয়ে যাওয়ায় কমরেড শিবদাস ঘোষ ইস্যুই ছিলো প্রধান। তারা শিবদাস ঘোষকে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে মার্কস-লেনিনের মতো জায়গায় দেখতে চেয়েছেন এবং বাসদের পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি ঘোষণাও চেয়েছেন।”
“কিন্তু আমরা বলেছি, বাসদ এককভাবে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে কাউকে কোনো স্থান করে দিতে পারে না। তবে তার থেকে আমরা অতীতে শিক্ষা নিয়েছি, ভবিষ্যতেও নিব।”
এছাড়া সিপিবির অতীত ঘেটে তারা এই ঐক্য নিয়ে নানা কথা বলেছে জানিয়ে খালেকুজ্জামান বলেন, “আমরা বলেছি, সিপিবি এখন কি বলছে সেটাই মুখ্য বিষয়। এমনকি ভবিষ্যতে যদি তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলে যায় তাহলে আমরা তখন তাদের সঙ্গে যাবো না।"
এর বাইরে অন্য কোনো বিষয় এর আগে তারা দলীয় ফোরামে আলোচনা করেনি বলে দাবি করেন খালেকুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলন শেষে একটি মিছিল পল্টন, বায়তুল মোকাররম, স্টেডিয়াম, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা।
ভারতের বামপন্থী দল সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়ার (এসইউসিআই) নেতা শিবদাস ঘোষের চিন্তা-চেতনার আলোকে ১৯৮০ সালে বাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। এর দুই বছর পর আদর্শগত মতবিরোধের জের ধরে বাসদ (মাহবুব) ও বাসদ (খালেকুজ্জামান) নামে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়।
এরপর ২০০৫ সালে বাসদের ছাত্রসংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের তৎকালীন সভাপতি নুরুল ইসলামসহ একটি অংশের নেতারা বাসদ ও ছাত্রফ্রন্ট থেকে আলাদা হয়ে যান।
সর্বশেষ ২০১০ সালের আগস্টে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা প্রয়াত আবদুল্লাহ সরকার ও সাইফুর রহমান তপনসহ কয়েকজন নেতা দল থেকে বেরিয়ে যান।
গত বছর সিপিবির সঙ্গে দ্বিদলীয় জোট করার পর গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা থেকে সদস্যপদ স্থগিত করা হয় বাসদের।
আরও পড়ুন
WARNING:
Any unauthorised use or reproduction of bdnews24.com content for commercial purposes is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
সর্বাধিক পঠিত
- কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৯
- মাহমুদুলের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের দারুণ জয়
- অবশেষে হচ্ছে বিপিএলের বাইরে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট
- ছেলে সন্তানের জন্ম দিলেন আইএসের শামীমা বেগম
- ৫ সেঞ্চুরিতেও আশরাফুলের ১৫ লাখ যে কারণে
- ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কে কোন দলে
- স্মিথের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সামনে বড় লক্ষ্য
- ‘বদিকে দিয়ে মাদক, শাজাহান খানকে দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব?’
- আরও ৩টি ব্যাংক অনুমোদন
- ফুটবল খেলাটা সহজ করে তোলে মেসি: দেম্বেলে