ঢিলেঢালা হরতালে প্রাণ গেল ৩ শ্রমিকের

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ৩৬ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে সারাদেশে বড় ধরনের সংঘর্ষ না হলেও যশোরে পিকেটারদের ধাওয়ায় প্রাণ গেছে তিন শ্রমিকের।

আজিজ হাসানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2013, 08:45 AM
Updated : 28 March 2013, 08:52 AM

রাজশাহীতে পুলিশের গাড়িতে বোমা মেরে পালানোর সময় আটক হয়েছে দুই শিবির কর্মী। চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। সেখানে হরতাল সমর্থকদের হাতবোমায় আহত হয়েছে স্কুল ছাত্রী।

হরতালে সিলেট ও রংপুরে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

গত ১১ মার্চ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ৩৬ ঘণ্টার এই হরতালের ডাক দেয় ১৮ দলীয় জোট। বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেষ হয় তাদের কর্মসূচি।

বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে।

যশোরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যশোর-খুলনা মহাসড়কের পদ্মবিলা এলাকায় সিমেন্টবোঝাই একটি ট্রাক হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে তিন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

চাঁদপুরের গুনরাজদী এলাকায় রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলার  বিভিন্নস্থান থেকে ১০ হরতালকারীকে আটক করা হয়েছে।

রাজশাহীতে বিসিক ভবনের সামনে সকালে হরতালের সমর্থকরা হাতবোমা ছুড়ে পালানোর সময় পুলিশ  মটরসাইকেল আরোহী দুই শিবিরকর্মীকে আটক করেছে।

আর চট্টগ্রামে সকালে হেমসেন লেইনের মুখে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অন্তু বড়ুয়া (১৪) আহত হয়। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এরপর নগরীর নিমতলা বিশ্বরোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় ১০ থেকে ১২ কর্মী আহত হয়েছে বলে বন্দর থানা বিএনপির সভাপতি এম এ আজিজ দাবি করেছেন।

সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবির কর্মীদের ছোড়া গুলিতে এক পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের ইটের আঘাতে গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শকসহ আহত হয়েছেন দুই পুলিশ। তাদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দুপুরে হরতাল সমর্থক বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ কর্মীদের দুই দফা সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৫ জন আহত হওয়ার খবর মিলেছে। পরে সেখানে বিএনপি সমর্থিত সাবেক ইউপি সদস্য ফজলুর রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।  ঘটনাস্থল থেকে ৫ হরতাল সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ।

হরতালের দ্বিতীয় দিনে ময়মনসিংহে হরতাল সমর্থকরা বেশকিছু হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। হরতাল চলাকালে সংঘর্ষে তিন পুলিশসহ অন্তত ২৫জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে ২০ পিকেটারকে।

খুলনায় মিছিল এবং নগরীর অন্তত আটটি পয়েন্টে  সড়ক অবরোধ করে রাখে হরতালকারীরা। তবে কোথাও কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। আতঙ্ক ছড়াতে ভোরে নগরীর গোয়ালখালী এলাকায় চারটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এদিকে নোয়াখালীতে আগের রাতে বিএনপি ও জামায়াতের ২৭ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে বিএনপির ১৫ জন, জামায়াতের ৬ জন এবং ছাত্রশিবিরের ৬ কর্মী রয়েছে।

সকাল থেকেই নোয়াখালীতে হরতালের সমর্থনে খণ্ড খণ্ড মিছিল হলেও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে উপজেলায় যুবদলের আহ্বায়ক পলাশকে আটক করা হয়। পুলিশের লাঠিপেটায়  ১০ নেতা কর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

সিরাজগঞ্জে দুটি পিকআপ ভ্যান ও একটি অটোরিকশায় আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। এ ঘটনায় বিএনপির তিন কর্মী ও জামায়াতের এক ইউনিয়ন আমীরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া বাগেরহাট, নরসিংদী, জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলায় হরতালের সমর্থনে বিক্ষিপ্ত মিছিল হলেও কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।