শাহবাগের কঠোর সমালোচনায় খালেদা

যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে তরুণ প্রজম্ম যে আন্দোলন করছে তা ‘উস্কানিমূলক’ ও ‘বেআইনি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2013, 09:43 AM
Updated : 1 March 2013, 01:25 PM

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, “একটি গোষ্ঠীকে সরকার উস্কানিমূলক ও বেআইনি কর্মকাণ্ড সংঘটনে প্রতিনিয়ত আস্কারা ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। জাতীয় জীবনে বিভেদ-বিভাজনকে উস্কে দিচ্ছে।”

বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানানোর জন্য সরকারেরও কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধী দলের নেতা।

“শাহবাগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে প্রতিটি অভিযুক্তকে ফাঁসি দেয়ার যে দাবি জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শুধু সমর্থনই ব্যক্ত করেননি, বরং ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের দাবি বিবেচনায় রেখে রায় দেওয়ার আহ্বান জানান। কোনো সভ্য ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ ধরণের ঘটনা নজিরবিহীন।”

সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদককে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হচ্ছে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে।

এই দাবির প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, “তারা নির্যাতিত সাহসী সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তারের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।”

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে যুদ্ধাপরাধে জড়িত দল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিরুদ্ধে দেয়া স্লোগানের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “বিক্ষোভকারীরা ভিন্ন মতাবলম্বীদের ধরে ধরে জবাই করার আওয়াজ তুলছে।”

জামায়াত সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যম বর্জনের শপথ ও ঘোষণা নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “সরকার-বিরোধী সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ করার হুমকি দিচ্ছে তারা।”

এছাড়া সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি জামায়াত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাংচুরের বিষয়ে ইঙ্গিত করে বিএনপি প্রধান বলেন, “বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুরে উৎসাহিত করছে তারা।”

এসবের মাধ্যমে জনজীবনে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও জাতীয় অর্থনীতিকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে চলমান আন্দোলনে সরকারের সমর্থনের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, “সরকারের মন্ত্রীরা তাদের কাছে গিয়ে এসব কর্মকাণ্ডে সমর্থন যোগাচ্ছে।”

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবনের রায় প্রত্যাখ্যান করে তার ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়। প্রথমে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক নামে একটি সংগঠন আন্দোলনের ডাক দিলেও তাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের লাখো মানুষ যোগ দেয়।

এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেন প্রবাসীরা। যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি ও যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানেও সমাবেশ করছে শাহবাগের আন্দোলনকারীরা।

তাদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সরকার ইতোমধ্যে ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করেছে। এর ফলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার সাজা বাড়াতে আপিল করার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধে সংশ্লিষ্টতার কারণে দল হিসাবে জামায়াতেরও বিচার করার পথ তৈরি হয়েছে।