‘ধর্ম অবমাননাকারী’ ব্লগারদের শাস্তি এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ‘ষড়যন্ত্রে’র প্রতিবাদে ইসলামী ও সমমনা ১২ দলসহ কয়েকটি সংগঠন জুমার নামাজের পর পর বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ইসলামী ১২ দলের কর্মসূচিকে ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামী কর্মীরা এই সহিংসতা চালিয়ে থাকতে পারে ধারণা করছে পুলিশ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিলেট প্রতিনিধি জানান, নগরীর চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবক (২৮) মারা যান।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উজ্জ্বল দত্ত বলেন, নিহত ব্যক্তির পেট ও পিঠে গুলি লেগেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধদের মধ্যে রয়েছেন মখলিছ আহমেদ (৪০), সুহেন আহমেদ (৩৫), খায়রুল আহমেদ (৩২), শহীদ চৌধুরী (৪৫) ও ফারুক আহমেদ (৩২)। বাকিদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, সংঘর্ষের পর পুলিশ ৫৬ জনকে আটক করেছে।
তিনি আরো বলেন, চৌহাট্টা থেকে জিন্দাবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিলের দাবিতে দুপুরে একটি মিছিলে এক দল যুবক বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে পিটুনিতে নিহত হন ঝিনাইদহ শহরের সিদ্দকীয়া আলিয়া মাদ্রাসার আরবী শিক্ষক আব্দুস সালাম (৫৫)। তার গ্রামের বাড়ি রাজবড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায়।
সংঘর্ষে দুই সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন।
এ সময় পুলিশ গিয়ে বেশ কয়েক রাউণ্ড টিয়ার গ্যাস শেল নিক্ষেপ দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো হাসানুজ্জামান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিলের দাবিতে মিছিলটি শহরের হাটখোলা এলাকা থেকে পায়রা চত্বরের দিকে আসছিল। এ সময় একদল লাঠিধারী যুবক তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে।
তিনি বলেন, সংঘর্ষে লাঠিপেটায় আহত আব্দুস সালামকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ আল মামুন তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, এ ঘটনায় দুই জনকে আটক করা হয়েছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষের সময় দুই সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে তাদের শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান জান্না বলেন, আওয়ামী লীগ বা এর কোনো সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের কোনো সংঘর্ষ হয়নি।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, পলাশবাড়িতে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে একদল লোক শহরের চৌমাথায় গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুর করেছে।
এ সময় পুলিশ বাধা দিলে সংর্ঘষে দুইজন নিহত হয়েছে।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম দুইজন নিহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচয় জানা যায়নি।
আহত হন পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন, যার মধ্যে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এছাড়া গাইবান্ধা শহরেও পুলিশের সাথে মুসুল্লিদের সংঘর্ষ হয়। দুই জায়গা থেকে পুলিশ ২০ জনকে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, পলাশবাড়ির বিভিন্ন মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভকারীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের রংপুর বাস স্ট্যান্ডে জড়ো হয়ে দা কুড়াল খুন্তিসহ দেশি অস্ত্র নিয়ে বিশাল মিছিল বের করে। মিছিলটি ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের চৌমাথায় এসে গণজাগরণ মঞ্চ ভাংচুর করে।
পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল এবং ২০ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, মিছিলকারীরা মহাসড়কে বহু যানবাহন ভাংচুর করে। শুরু করলে মহাসড়কে ২ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।