রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি অভিযোগ করে বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে টাকা ও লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে শাহবাগের আন্দোলনকে দলীয়করণ করা হয়েছে- এই অভিযোগ থেকে সরকার মুক্তি পাবেন কিভাবে? এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্দোবস্ত করা। অথচ বলা হচ্ছে, শাহবাগে জনগন স্বস্তঃস্ফূর্ত।”
“শাহবাগের ৫০ গজ দূরে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। আর ১০০ গজ দূরে গোলাম আজম। দুই পক্ষই এই নাটক শুনছেন ও দেখছেন। জনগণের কাছে আজ সরকারের এই নাটক ধরা পড়ে গেছে।”
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ হওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। শুক্রবার লাখো মানুষের অংশগ্রহণে হয় আন্দোলন অব্যাহত রাখার শপথ।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজকার এবং জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় উল্লেখ করে আ স ম হান্নান শাহ বলেন, “একজনের ফাঁসি আর আরেকজনের যাবজ্জীবন। এই দুই রায় থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত যে সরকার যুদ্ধাপরাধীর রায়কে প্রভাবিত করছে। শাহবাগের আন্দোলনে সরকারের দ্বৈতনীতি প্রকাশ পেয়ে গেছে।”
তিনি প্রশ্ন রাখেন, “যুদ্ধাপরাধীর রায় ঘোষণার পর আজ আওয়ামী লীগের কোনো কোনো মন্ত্রী বলছেন, এই রায় সঠিক হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, রায় বদলিয়ে সবার ফাঁসির ব্যবস্থা করবেন।”
“আমরা কিছু বললে আদালত অবমাননা হয়। আর মন্ত্রীরা বললে তা আদালত অবমাননা হয় না।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ বলেন, “আমরা যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। সরকার বিচার করছে, ভালো কথা। আমাদের প্রশ্ন- একাত্তরে চিহ্নিত ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী যাদের পরবর্তীতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দাসখত দিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলো, তাদেরও পাকিস্তান থেকে এনে বিচার কেনো করা হচ্ছে না।”
তিনি দাবি করেন, “সরকারের ভেতরে একাত্তরের পাকিস্তানিদের যেসব দোসর অবস্থান করছেন, তাদেরও যুদ্ধাপরাধীর অপরাধে বিচার করতে হবে।”
শাহবাগের উপস্থিত তারুণদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বিস্কুটসহ খাদ্য সরবারহ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শাহবাগের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে হলে জনগন একে সাদুবাদ জানাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর একাত্তরের ভুমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জামায়াত মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন দেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতা করেছে। কেবল তারাই নয়, একাত্তরে পিকিংপন্থীরাও বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশপাশে আজ তারা অবস্থান করছে। এই সরকার একটা ভাওতাবাজীর সরকার- এটাই তার প্রমাণ।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বাধীনতা সংরক্ষন ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘নারী নির্যাতন ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
সারাদেশে ব্যাপক নারী নির্যাতনের ঘটনাবলীর জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও সামজিক অবক্ষয় সৃষ্টির জন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন হান্নান শাহ।
সংগঠনের সহসভাপতি সায়মা সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে ইসলামিক পার্টির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উপদেষ্টা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, জাতীয়তাবাদী যুব দলের সহসভাপতি ফারুক আহমেদ, নাগরিক সংসদের সভাপতি খালেদা ইয়াসমীন, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সভাপতি সানজানা চৈতী পপি, সংগঠনের মহাসচিব আহসান উল্লাহ শামীম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।