ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে ‘বিএনপি নেই’

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলে জামায়াতে ইসলামীর দাবির সঙ্গে বিএনপি ‘একমত নয়’ বলে জানিয়েছেন দলটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Feb 2013, 04:02 AM
Updated : 4 Feb 2013, 04:06 AM
বিএনপির মুখপাত্র হিসাবে কাজ চালিয়ে আসা তরিকুল ইসলাম সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই- আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধে জামায়াতের দাবির সঙ্গে আমাদের আদর্শিক সর্ম্পক নেই। আমরা ওই দাবির সঙ্গে একমত নই। একমত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার ‘স্বচ্ছ হচ্ছে না’ বলেই মনে করে বিএনপি।

ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে জামায়াত-শিবির নেতকর্মীরা। এ দাবিতে ৩১ জানুয়ারি সারা দেশে হরতালও করেছে তারা। আর সেই হরতালে সমর্থন দিয়েছে বিএনপিও।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তরিকুল ইসলাম বলেন, জামায়াতকে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে তাদের হরতালে সমর্থন দেয়া হয়েছে। কারণ বিএনপি মনে করে, একটি রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।

কিন্তু জামায়াত ওই হরতালে করেছিল  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, “এটা ঠিক নয়। আমরা কেন সমর্থন দিয়েছি  তা বিবৃতি দিয়ে বলেছি। আমাদের পক্ষে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বিবৃতি দিয়েছেন।”

“বিএনপি যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়”, বলেন তরিকুল ইসলাম।

তবে এই বিচারের ক্ষেত্রে ‘আন্তর্জাতিক মান ও স্বচ্ছতা’ বজায় রখাতে হবে দাবি করে তিনি বলেন, “দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিচার হলে চলবে না।”

“আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, এই বিচার বির্তকিত। আমরাও বলছি, এই বিচার স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হোক। স্বচ্ছ হচ্ছে না বলেই তো আমরা স্বচ্ছতার কথা বলছি”, বলেন তরিকুল।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ ব্রিফিং হয়।

‘জোট ভাঙার ষড়যন্ত্র’

তরিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সামনে রেখেই তারা আন্দোলন করছেন। বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় ছিল এবং আবারে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে চায়। তাই আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।

সরকার নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদলীয় জোটে ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে- এমন আশঙ্কা থাকলেও তাতে কোনো ক্ষতি হবে না বলেই বিশ্বাস করেন তরিকুল।

তিনি বলেন, “জোটের দুই-একটি শরিক দলকে নিয়ে গেলে বিএনপির কোনো ক্ষতি হবে না। বঙ্গোপসাগর থেকে ২/৪ বালতি পানি তুলে নিলে সমুদ্রে যেমন ক্ষতি হয় না,  তেমনি বিএনপিরও কোনো  ক্ষতি হবে না।”

“জামায়াত ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে আছে  এবং থাকবে ”, বলেন তিনি।

তরিকুল বলেন, “এমনও তো হতে পারে ক্ষমতাসীন মহাজোটও ভেঙে যেতে পারে। সেই জোট থেকেও ২/৩টি দল বেরিয়ে আসতে পারে। কী হবে তা সময়ই বলে দেবে।”

১৯৮৬ সালে এইচ এম এরশাদের সময়ে এবং ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র হয়েছিল মন্তব্য করে এই তিনি বলেন, “কিন্তু ষড়যন্ত্র করে কোনো লাভ হয়নি। বিএনপি আরও শক্তিশালী হয়েছে।”