‘আঁতে ঘা লাগায় এত সমালোচনা’

খালেদা জিয়া নিবন্ধে সরকারের সঠিক তথ্য তুলে ধরেছেন বলেই আওয়ামী লীগ এতো সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।    

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2013, 05:53 AM
Updated : 1 Feb 2013, 08:48 PM

তার ভাষায়, “সরকারের আঁতে ঘা লেগেছে বলেই বিরোধী দলীয় নেতার প্রকাশিত নিবন্ধ নিয়ে গতকাল সংসদে কুরুচিপূর্ণভাষার সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের সমালোচনাই প্রমাণ করে বিরোধী দলীয় নেতা নিবন্ধে সত্য কথা বলেছেন।”

শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর দক্ষিণ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সমাবেশে মওদুদ এ কথা বলেন।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির দাবিতে এক বিক্ষোভ মিছিলের আগে এই সমাবেশ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন টাইমসের মতামত পাতায় প্রকাশিত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার নামে ছাপা নিবন্ধ নিয়ে বৃহস্পতিবার সংসদে সমালোচনায় ফেটে পড়েন সরকারি দলের সদস্যরা। তারা ওই নিবন্ধকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহসম’ অপরাধ বলে আখ্যা দেন।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, “সরকারি দলের সদস্যরা বলেছেন, ওই নিবন্ধটি রাষ্ট্রদ্রোহসম। আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, সমালোচনা করলে তা রাষ্ট্রদ্রোহ হয় না। রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি পড়ে এরপর সমালোচনা করুন।”

বাংলাদেশ গণতন্ত্রের বদলে একটি দল বা পরিবারের শাসনে যাচ্ছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বুধবার ওই নিবন্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অডিট ব্যুরো অব সার্কুলেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে সর্বাধিক প্রচারিত পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, যার সার্কুলেশন প্রায় ২৩ লাখ। প্রচার সংখ্যার দিক থেকে প্রথম ২৫টি পত্রিকার তালিকায় স্থান হয়নি এক লাখেরও কম সার্কুলেশনের ওয়াশিংটন টাইমসের।

পত্রিকাটিতে খালেদা জিয়ার নামে ছাপা হওয়া নিবন্ধের বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সমালোচনা করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, দীপু মনি, বেবী মওদুদ প্রমুখ।

ওই নিবন্ধের বক্তব্যের জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতেও খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তারা।

সংসদে সরকারি দলের সদস্যদের বক্তব্য প্রসঙ্গে মওদুদ বলেন, “বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র নেই। আইনের শাসন ও মানবাধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।

“সরকার আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য খালেদা জিয়া ওয়াশিংটন টাইমসে নিবদ্ধ লিখেছেন। গণতন্ত্রকে সুরক্ষা করার জন্য এই নিবন্ধ লেখা হয়েছে।’’

১৯৯১- ১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার বিদেশে গিয়ে নানা কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে মওদুদ বলেন, “ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে গিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছেন। ফ্রান্সে গিয়ে সেদেশের সংসদ সদস্যদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিল পাস করার জন্য। এসব কর্মকাণ্ডের কথা কী আপনারা ভুলে গেছেন?

“কেবল তাই নয়, ওয়াশিংটনে গিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার অনুরোধ করেছিলেন। ফ্লোরিডায় গিয়ে তিনি বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলেছেন।”

তিনি বলেন,  বিরোধী দলীয় নেতা ওই নিবন্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী দেশসমূহের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ওই নিবন্ধ বিএনপিকে রক্ষার জন্য লেখা হয়নি। দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য খালেদা জিয়া এই লেখা লিখেছেন।

মওদুদ অভিযোগ করেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি করে সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে কলঙ্কিত করেছে। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংকের প্রধান বলে দিয়েছেন, শর্ত পূরণ না হলে ওই সেতু প্রকল্পে আর অর্থায়ন করবে না।

দক্ষিন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আলী রেজা রিপনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

‘এই সংসদ একদলীয়’

পরে দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবিধানিক অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘রাজনীতি ও আগামী নির্বাচন পদ্ধতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় মওদুদ বলেন, “সরকার সংসদকে একদলীয় সংসদে পরিণত করে ফেলেছে। এখানে জনগণের সমস্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। কেবল বিরোধী দলের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তৃতা হয়।”

সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোরশেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা সুরঞ্জন ঘোষ ও হৃদয় বাংলাদেশের সভাপতি মো. হানিফ বক্তব্য রাখেন।