বৃহস্পতিবারের হরতালে পিকেটারদের সঙ্গে হরতালবিরোধীদের সংঘর্ষে এক শিবির নেতা নিহত হওয়ার পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সংগঠনটির কর্মীরা।
শিবিরকর্মীরা এক পর্যায়ে কোনঠাসা করে ফেললে পুলিশ গুলি ছুড়তে ‘বাধ্য’ হয় বলে জানান বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মকবুল হোসেন।
গুলির মুখে পিছু হটে শিবিরকর্মীরা আযিযুল হক কলেজের একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ছাত্রাবাসে আগুন দেয়, যেটিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা থাকতেন বলে স্থানীয়রা জানায়।
দিনভর সংঘাতের পর রাতে শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে শিবিরের ৩২ জনকে।
সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- ছাত্রশিবিরের আযিযুল হক কলেজ শাখার সভাপতি আবু রুহানী, শিবিরকর্মী আবদুল্লাহ ও ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন, নিহতের সংখ্যা চারজন।
জামায়াতের বগুড়া শহর শাখার সেক্রেটারি মাজেদুর রহমান জুয়েল বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামায়াতকর্মী হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শনিবার বগুড়া জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে।”
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল এবং আটক নেতাদের মুক্তি দাবিতে জামায়াতের ডাকা হরতালে বৃহস্পতিবার দিনের প্রথমভাগে কয়েকটি স্থানে পিকেটারদের সঙ্গে হরতালবিরোধীদের সংঘর্ষ হয়।
এতে আহত হন রুহানী ও মিজান। পরে হাসপাতালে মারা যান এই দুজন। রুহানীর মৃত্যুর পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন আবদুল্লাহ।
নিহত মিজানুর রহমানকে জামায়াত তাদের কর্মী বলে দাবি করলেও পুলিশ বলছে, এই ব্যক্তি ব্যবসায়িক কাজে কুমিল্লা থেকে বগুড়া এসেছিলেন।
জামায়াত দাবি করেছে, আওয়ামী লীগকর্মীদের হামলায় রুহানী ও মিজানুর মারা গেছেন। তবে পুলিশের দাবি, রুহানী সংঘর্ষে নিহত হলেও পোল্ট্রি ব্যবসায়ী মিজানের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।
জামায়াত নেতা মাজেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুপুরে শহরের সাবগ্রাম এলাকায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পিকেটিংয়ের সময় তাদের ওপর হামলা চালায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা।
“পিকেটিংয়ের সময় সরকারি দলের এক নেতাকে মোটর সাইকেল থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে সেই নেতার নেতৃত্বে জামায়াত নেতাকর্মীদেরকে ওপর সশস্ত্র হামলা হয়।”
মাজেদ দাবি করেন, ব্যবসায়ী মিজানুরকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে হরতালবিরোধীরা।
মিজানুরকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান।
সকালে শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় হরতালের পক্ষে-বিপক্ষের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন শিবির নেতা রুহানী। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে তিনি মারা যান বলে জানান জামায়াত নেতা মাজেদুর।
বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মকবুল হোসেন জানান, হরতালে সংঘর্ষের সময় রুহানী আহত হন এবং পরে তার মৃত্যু হয়।
মিজানুর পোল্ট্রি ব্যবসার কাজে কুমিল্লা থেকে বগুড়া এসেছিলেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
রুহানীর মৃত্যুর খবর শুনে বিকালে শহরের সাতমাথা জিরো পয়েন্টে পুলিশের ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তারা হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে সাতমাথায় এগিয়ে আসে। এ সময় তারা পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হাতবোমা ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তারা পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে থানায় ঢুকিয়ে দেয়।
এরপর প্রায় ৪ শতাধিক পুলিশ- র্যাব সদস্য কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছুড়তে থাকলে শিবিরকর্মীরা সাতমাথা ছেড়ে আযিযুল হক কলেজের দিকে চলে যায়।
কলেজে কাছে জামিলনগর এলাকায় গিয়েই শিবিরকর্মীরা জুয়েল ছাত্রাবাসে আগুন দেয়। এতে ছাত্রলীগের অনেক কর্মী থাকতেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
এএসপি মকবুল জানান, ছাত্রাবাসের আগুল লাগার খবর পেয়ে অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে পুলিশ আগুন নেভাতে যায়। তখন জামায়াত-শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর গুলি ও বোমা ছুড়তে থাকে।
“তখন পুলিশও আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে,” বলেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সংঘর্ষের পর শিবিরকর্মী আবদুল্লাহর লাশ পাওয়া যায়।
তিনি কীভাবে নিহত হয়েছেন, সেই বিষয়ে পুলিশের স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিবিরের জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদক মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশের গুলিতে আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার কথা তিনি শুনেছেন।
“আমি হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলান, তবে যেতে না পেরে ফিরে এসেছি।”
আবদুল্লাহ লাশ বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ আরো কয়েকজনকে ওই হাসপাতালে আনতে দেখা গেছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেন, পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন।
তবে নিহতদের নাম বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়নি।
নিহতদের জন্য শুক্রবার দোয়া দিবস পালন করবে জামায়াত। পরে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে, বলেছেন রফিকুল।
বগুড়ার সহকারী কমিশনার হাবিবুল হাসান রুমি সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি সদস্যদের চাওয়া হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জানান, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩২ শিবিরকর্মীক গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সারাদেশে ডাকা এই হরতালে বগুড়া শহরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর চালায় জামায়াতকর্মীরা।
সকাল ৮টার দিকে শিবিরকর্মীরা উপশহর এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি মটর সাইকেল ভাংচুর করে।
খবর পেয়ে পুলিশ দুই পিকেটারকে আটক করলে শিবিরকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট ছুড়তে থাকে। ওই সময় পুলিশের একটি শটগান খোয়া যায়। পরে ধাওয়া দিয়ে ওই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
শাজাহানপুর থানার পুলিশ পরির্দশক মাহমুদুল আলম জানান, বেতগাড়িতে শিবিরকর্মীরা কয়েকটি গাড়িতে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে শিবিরকর্মীরা পালিয়ে যায়।