আদেশ পেলে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধ ‘দেখবে’ ইসি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশ পেলে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি ‘দেখবে’ বলে জানিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2013, 02:46 AM
Updated : 25 Jan 2013, 02:47 AM

তবে কমিশন ‘স্বপ্রণোদিত হয়ে’ এখনই কিছুই করছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশের পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ বলে, একাত্তরে ‘পাকিস্তান রক্ষার’ নামে দলটি ‘সশস্ত্র সংগঠন’ গড়ে তোলে এবং নিরস্ত্র বাঙালিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে।

আদালতের ওই আদেশের পর জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি আরো জোরালো হয়ে ওঠে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান আইনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সম্ভব নয়। যুদ্ধাপরাধের কারণে নিবন্ধন বাতিল করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) একটি বিধান যুক্ত করতে হবে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তির কারণে দলকে অভিযুক্ত করার সুযোগ তাতে নেই। অভিযুক্ত দলের বিরুদ্ধেও ইসির ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান নেই।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের নিবন্ধন বাতিলের শর্তে ‘যুদ্ধাপরাধ’ প্রসঙ্গ না থাকায় এ দলটি নিবন্ধন বাতিল সম্ভব নয়। তবে অন্যান্য শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে মনে করেন সাবেক আইন সচিব ছহুল হোসাইন।

তিনি বলেন, “আদালত কোনো দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার বিষয়ে আদেশ দেয়ার পর ওই  দলের নিবন্ধন বাতিল করতে হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সংশোধনী এনে নতুন বিধান যুক্ত করতে হবে।”

তবে সরকার যদি কোনো দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে বলে ছহুল হোসাইন জানান।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত সোমবার দেয়া রায়ে আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ফরিদপুরের এ যুদ্ধাপরাধী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। 

রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, আদালত স্পষ্ট করে বলেছে, ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানিদের সহযোগী ছিল।

ঐতিহাসিক এ রায়ের মধ্য দিয়ে জামায়াত ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আরো জোরদার হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।

ট্রাইব্যুনালের এমন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মহামান্য আদালত কোনো আদেশ দিলে তা সবার জন্য পালনীয়। নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে কোনো অর্ডার এলে তখন দেখা হবে। স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো কিছু করব না আমরা।”

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নিবন্ধনের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে বা শর্ত পূরণ না হলেই কেবল কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ইসি ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আছে বলে জানান সাবেক এ  জেলা জজ।

বাংলাদেশের সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সঙ্গে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক- এমন দাবি তুলে দীর্ঘদিন ধরেই দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন শক্তি।

এসব বিরোধীতা এবং গঠনতন্ত্রের অন্তত সাতটি ধারা নিয়ে আপত্তির মধ্যেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে শর্তসাপেক্ষ ইসির নিবন্ধন পায় জামায়াত। পরে বাংলাদেশের সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো পরিবর্তনের জন্য জামায়াতকে তিনবার চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন।

গত বছরের নভেম্বরে কাজী রকিবউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন জামায়াতকে গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য একমাস সময় বেঁধে দেয়।

সবশেষ গত বছরের ২ ডিসেম্বর জামায়াত সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্র ইসিতে জমা দেয়। তবে তাতে ইসি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেনি বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক।

এ জন্য জামায়াতকে আবারো গঠনতন্ত্র সংশোধনের কথা বলা হতে পারে বলে জানান এই কমিশনার।