ঝাঁঝালো গ্যাস: মন্ত্রীর বিচার দাবি বিএনপির

আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ‘ক্ষতিকর’ পেপার স্প্রে (ঝাঁঝালো গ্যাস) ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিচার চেয়েছে বিএনপি।

প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2013, 02:39 AM
Updated : 17 Jan 2013, 02:41 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের এক প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এই স্প্রে ব্যবহারে দুই জনের মৃত্যু হয় এবং জীবনের আশঙ্কা তৈরি হয় ২১ জনের।

“পশ্চিমা বিশ্বে কুকুর ও হিংস্র পশুকে ঘায়েল করতে এই স্প্রে ব্যবহার করা হয়। আর আমাদের এখানে শিক্ষকদের ওপর এর প্রয়োগ ঘটছে।”

‘বিরোধী দল ও ভিন্নমতকে’ দমানোর জন্যই পুলিশ পেপার স্প্রে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন তরিকুল।

তিনি বলেন, “এ ধরনের স্প্রে ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিচার হওয়া উচিৎ।”

এর আগে একই কারণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

বুধবার সিপিবি-বাসদসহ কয়েকটি বাম দলের হরতালে নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক হারে এই ঝাঁঝাল গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এতে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ও বাম মোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা মোশরেফা মিশুসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।

এর আগে গত কয়েকদিন ধরে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে এই স্প্রে ব্যবহার করা হয়। স্প্রের প্রভাবে আহত এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে বলে শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেন।

অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই গ্যাসে কারো মৃত্যু হয় না।  

পেপার স্প্রে বিভিন্ন দেশে ওসি স্প্রে (ওলেওরেসিন ক্যাপসিকাম), ওসি গ্যাস ও ক্যাপসিকাম স্প্রে নামেও পরিচিত। এর মধ্যে এমন রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা চোখে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে। এই গ্যাসের সংস্পর্শে আসামাত্র চোখে প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

নর্থ ক্যারোলাইনা মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওসি স্প্রে বা পেপার স্প্রেতে পানি, অ্যালকোহল, কার্বনডাইঅক্সাইড, হ্যালোজেনেটেড হাইড্রোকার্বন (ফ্রেয়ন, টেট্রাক্লোরোথাইলিন, মিথাইলিন ক্লোরাইড) রাসায়ানিকও ব্যবহার করা হয়।

এসব রাসায়নিকের প্রভাবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটিয়ে আকস্মিক মৃত্যুও ঘটাতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

নয়া পল্টনে বিএনপির মহানগর কার্যালয়ের মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তরিকুল ইসলাম বলেন, মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে বিএনপিকে সরানো যাবে না।

“বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাবন্দি রাখার জন্য আরও মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, দেশের মানুষ এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চায়। তাই এভাবে মামলা ও গ্রেপ্তার করে সব নেতা-কর্মীকে জেলে নিলেও এই আন্দোলন থামবে না।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট ধারাবাহিক আন্দোলন করে আসছে। হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে তারা। সর্বশেষ সারা দেশে এক ঘণ্টার মানবপ্রাচীর কর্মসূচি পালন করেছে।

তরিকুল বলেন, “সরকার দেশের গণতন্ত্রকে আজ খাঁচায় বন্দি করে ফেলেছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ও নিরাপত্তাহীনতায় জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। মঙ্গলবারের মানবপ্রাচীর দেশের মানুষ এই সরকারকে ‘না’ বলছে, গণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। তারপরও তারা ক্ষমতা আঁকড়ে আছে।”

সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তরিকুল বলেন, “দেয়ালে জনগণের পিঠ ঠেকে গেছে। আসুন এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করি, যুদ্ধ করি। হয় বাঁচবো, না হয় মরে যাব।”

আগামী ১৯ জানুয়ারি জিয়ার ৭৭তম জন্মবার্ষিকী। জিয়াকে ‘ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব’ উল্লেখ করে তার আদর্শ অনুসরণের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান তরিকুল।

জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির সহ-সভাপতি সেলিমা রহমান, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তকদির হোসেন জসিম বক্তব্য দেন।