স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি সিপিবির

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর হরতাল সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে পেপার স্প্রে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে থাকলে তার পদত্যাগ দাবি করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2013, 02:52 AM
Updated : 18 Jan 2013, 07:10 AM

বুধবার আধাবেলা হরতাল পালনের পর পল্টনের মুক্তিভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়তো বলবেন, বাংলাদেশ এনালগ থেকে ডিজিটাল হচ্ছে- তাই আইন রক্ষার কাজে নতুন অস্ত্র দিয়ে জনগণকে নাজেহাল করা হচ্ছে।

“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া এ বর্বরোচিত হামলা হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে এই হামলার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।”

আর তিনি যদি এই নির্দেশ না দিয়ে থাকেন, তাহলে যিনি এই নির্দেশ দিয়েছেন তাকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ডাকা এই হরতালের সমর্থনে সকালে পল্টনে মিছিল বের হলে তাতে পেপার স্প্রে (ঝাঁঝালো গ্যাস) ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তখন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বামমোর্চার কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল হক ও মোশরেফা মিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পল্টনে  সিপিবি কার্যালয়ের সামনে হরতালের সমর্থনে সমাবেশেও পেপার স্প্রে ও জলকামান  ব্যবহারের  পাশাপাশি লাঠিপেটাও করে পুলিশ। এতে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম শুভসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীসহ সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের দাবিতে সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা হরতাল করে। সেই হরতালে বাধা দেয়ার বদলে পুলিশ সহযোগিতা করেছিল বলে অভিযোগ এনেছিল বিএনপি।

সেদিনের হরতালে ভাংচুর ও  জ্বালাও-পোড়াও না করার জন্য বামদলগুলোকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই হরতাল থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু বুধবার একই ধরনের ‘শান্তিপূর্ণ’ হরতাল কর্মসূচিতে পুলিশের চড়াও হওয়ায় সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

তিনি বলেন, “এর আগে বামপন্থীদের ডাকা হরতালে সরকার নমনীয় ভাব পোষণ করে বামপন্থীদের নিজেদের সহযোগী বলে প্রমাণ করা ও আমাদের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। আর এবার একই ইস্যুতে হরতাল আহ্বান করলেও পুলিশ স্ববিরোধী আচরণ করছে।”  

ওই সমাবেশ থেকে পেপার স্প্রে ব্যবহারের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ঘোষণা দেন সিপিবি সভাপতি।

তিনি বলেন, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে আমেরিকা এ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করেছিল। আর এখন তা এদেশে অন্দোলনকারীদের ওপর ব্যবহার করা হচ্ছে।

“একটি অবৈধ কেমিক্যাল। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই ঝাঁঝালো গ্যাস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেখানে আগে যখন এটি ব্যবহার করা হতো তখন পুলিশ এক ধরনের মাস্ক ব্যবহার করতো। কিন্তু আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তা ব্যবহারের সময় মাস্ক ব্যবহার করছে না। ফলে এতে দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, এটি মানবদেহে স্থায়ী রোগসহ বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যা ধীরে ধীরে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপরও কয়েক দফা এই স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ।

পেপার স্প্রে লাগার পর চোখ তীব্র জ্বালা-পোড়ার পাশাপাশি সারা শরীরে ‘অসহ্য’ যন্ত্রণা শুরু হয় বলে শিক্ষকরা জানান।

এই স্প্রের বিষক্রিয়ায় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দুপুরে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতা এশারত আলী।

হরতাল সমর্থকদের ওপর পুলিশি নির্যাতন ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভের পাশাপাশি স্পিকারকে স্মারক লিপি দেয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন সিপিবি সভাপতি।