‘বিচার বন্ধে তারা ধ্বংসের পথে’

যুদ্ধাপরাধের বিচার শেষ করতে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2013, 07:11 AM
Updated : 11 Jan 2013, 07:11 AM

সরকারের চার বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বহু প্রতিক্ষিত এই বিচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াত যতো ষড়যন্ত্রই করুক, যতো অপচেষ্টা করুক- যুদ্ধাপরাধী, যারা মা-বোনদের সম্ভ্রম হরণকারী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।”

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধনীতাবিরোধী চক্রের লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বিচার শেষ করার প্রত্যয় জানিয়ে বলেন, “আমি দেশবাসী আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করি। দোয়া চাই।”

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই  ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে একযোগে সম্প্রচার করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই ২০০৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচার গণদাবিতে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি মানুষই এখন যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়।

এ বিচার নিয়ে প্রধান বিরোধীদলের অবস্থানের সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এ দাবিকে অগ্রাহ্য করে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মাঠে নেমেছে। নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। জামাত ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছে।”

যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে বিএনপির এই ঐক্য ‘নতুন কিছু নয়’ বলেও মনে করে শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “তাদের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে অবৈধ মার্শাল ল সরকার গঠন করে। তারপর যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধীদেরকে পুনর্বাসন শুরু করে। তাদেরকে জেল থেকে মুক্ত করে। অনেককে দেশে ফিরিয়ে আনে। নাগরিকত্ব দেয়। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রধানমন্ত্রী, উপদেষ্টা-মন্ত্রী বানায়।”

২০০৯ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দুটি ট্রাইব্যুনালে বতর্মানে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ দশ নেতা ও বিএনপির দুইজনের বিচার চলছে।  

এদের মধ্যে জামায়াতের সাবেক আমী গোলাম আযম স্বাধীনতার পর থেকেই বিদেশে অবস্থান করলেও জিয়ার আমালে বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং নাগরিকত্ব পায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালি হত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তাকারী হিসেবে গোলাম আযমের নামই সবার ওপরে উঠে আসে।

সরকারের চার বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে দেশের অর্থনীতি নিয়েও আশার কথা শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, চার বছরে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের রেমিটেন্স আসা, ২০ লাখ ৪০ হাজার লোককে কাজ দিয়ে বিদেশে পাঠানো, ১০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি-ইঞ্জিন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “সরকার গঠনের পর এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে পড়েছিলাম। তাই সরকারের প্রথম দিনই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক করে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী করণীয় নির্ধারণ করি। শুরু হয় সরকারের এক মহা কর্মযজ্ঞ।

“এই চার বছর সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। আপনারা সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করেছেন। দেশ দ্রুত এগিয়ে গেছে। প্রতিটি পরিবারে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।”

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও ভাষণে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। 

“দুদক এখন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। তদন্তের স্বার্থে দুদক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, এমপি, সচিবকে তলব করছে। বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছে। মামলা দিচ্ছে।

বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান এবং হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে গত বছর জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

শেখ হাসিনা বলেন, “সকল অনিয়ম দূর করার স্বার্থে হলমার্ক ও ডেসটিনির অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে এবং থাকবে।”

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুর দিকেই বলেন, “চার বছর পর আজ আমরা গর্বভরে বলতে পারছি, নির্বাচনের প্রাক্কালে যেসব অঙ্গীকার আপনাদের কাছে দিয়েছিলাম, নানামুখী প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্যের চেয়েও বেশি অর্জন করেছি।”

সামনের দিনগুলোতেও সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচক ইতিবাচক ধারায় এগোচ্ছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে।

“বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ২০১১ সালে দেয়া ‘জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন মডেল’ উত্থাপন এবং গত ডিসেম্বরে তা ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতিতে পাস হওয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার কন্যা সায়মা হোসেন পুতুলের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ‘অটিজম সচেতনতা’ সৃষ্টির লক্ষ্যে আরেকটি প্রস্তাব গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করি। সেটিও গত মাসে সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিরল সম্মান।”

এসব অর্জনে সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও অবদান রয়েছে মন্তব্য করে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে প্রতি বছর সরকারের বছরপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আসছেন শেখ হাসিনা।

২০১০ ও ২০১১ সালে ৬ জানুয়ারি এবং ২০১২ সালে ৫ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সরকার প্রধান। তবে এবার তিনি ভাষণ দিচ্ছেন বর্ষপূতির চার দিন পর।