গত ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কেবিন ব্লকের ৬২১ নম্বর কেবিনে ভর্তি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদাকে বুধবার দুপুরে একটি মাইক্রোবাসে করে হাসপাতালের ‘এ’ ব্লকে নেওয়া হয়। পরে হুইল চেয়ারে বসিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চতুর্থ তলায় ডেন্টাল ইউনিটে।
ঘণ্টা দেড়েক পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আবার তাকে কেবিনে ফিরিয়ে নেওয়া হয় বলে হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম জানান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ডেন্টাল ও ম্যাক্সিলোফেসিয়াল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকতারের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়াকে দাঁতের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পরে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “উনার (খালেদা জিয়া) দাঁতে কিছুটা সমস্যা ছিল। ডেন্টাল ডিপার্টমেন্টে তাকে নিয়ে সেটা কারেক্ট করে দেওয়া হয়েছে। নাথিং। আর কিছু না।”
সমস্যাটা কী ছিল জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, “উনার একটা সাইডের দাঁতের শার্পনেসের জন্য খেতে অসুবিধা হয়, জিহ্বায় লাগে। সেজন্য ওই দাঁতটি মসৃণ করে দেওয়া হয়েছে। মেশিন দিয়ে দাঁতের শার্পনেসটা গ্রাইন্ডিং করে সমান করে দেওয়া হয়েছে, যাতে জিহ্বায় খোঁচা না লাগে।”
“হাসপাতাল অথরিটি আজকে ডেন্টাল বিভাগে নিয়ে উনার দাঁত ঘষে ধারালো মাথাগুলোকে ঠিক করে দিয়েছে। তবে দেশনেত্রী এখনো সুস্থ হননি। আজকেও তাকে হুইল চেয়ারে করে ডেন্টাল বিভাগে নেওয়া হয়েছে। আমরা দাবি করব, তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক, তিনি যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।”
বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার যে দুইজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক আছেন, তাদের না জানিয়ে হঠাৎ করেই আজ দাঁতের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হল। যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে সেটা সাময়িক চিকিসা, তার দাঁতের সমস্যার স্থায়ী চিকিৎসা প্রয়োজন।”
ড্যাবের নেতা নজরুল ইসলাম, মোহাম্মাদুল্লাহ মোস্তফা, মনোয়ারুল কাদির লিটু, মহিলা দলে সাবিনা ইয়াসমিনও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক রোজার ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, মুখে জিহ্বায় ঘা হওয়ায় খালেদা জিয়ার খেতে সমস্যা হচ্ছিল। তবে তা অনেকটাই সেরে গেছে।
মাহবুবুল হক সেদিন বলেছিলেন, মুখের ওই ঘা মারাত্মক কিছু না। অনেকেরই তা হয়। অনেক সময় ছত্রাকের সংক্রমণে ঘা হয়। আবার দাঁতের কারণেও তা হতে পারে। প্রয়োজনে বিষয়টি তারা পরীক্ষা করে দেখবেন।
বুধবার খালেদা জিয়াকে দাঁতের চিকিৎসা দেওয়ার পর তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা নিয়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাসপাতালের পরিচালক।
তিনি বলেন, “উনার শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। উনি যাওয়ার সময়, ওঠার সময় আপনারাও দেখেছেন, উনি ভালো আছেন। উনি (হাসপাতালে) আসার দিন যা অবস্থা ছিল, ইনশাল্লাহ (এখন) অনেক অনেক বেটার।”
মাহবুবুল হক জানান, বিএনপি নেত্রীর ডায়াবেটিস এখন নিয়ন্ত্রণে আছে, তিনি নিয়মিত ইনসুলিন নিচ্ছেন।
সরকারের তরফ থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে, সুস্থ হলে খালেদাকে আর পুরনো কারাগারে ফেরানো হবে না। তার জন্য কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কবে তাকে কেরানীগঞ্জে নেওয়া হতে পারে- তা হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
উত্তরে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ অথবা আইজি প্রিজনস থেকে কোনো তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছু বলার সুযোগ নেই। আমরা জানি না। কোনো নির্দেশনা এখনও পাইনি।”
হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক নাজমুল করিম এবং উপ-পরিচালক খুরশীদ আলমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।