প্যারোলে ছাড়া খালেদার দ্রুত মুক্তির পথ দেখছেন না আইনজীবী

আইনি প্রক্রিয়ায় ‘স্বল্প সময়ের’ মধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় জানিয়ে তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন মানবিক বিবেচনায় বিএনপি নেত্রীকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকপিয়াস তালুকদার, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2018, 05:19 PM
Updated : 13 June 2018, 07:12 PM

তিনি বলছেন, ৭৩ বছর বয়সী খালেদা  কারাগারে ‘গুরুতর’ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার ‘জীবন শঙ্কা’ দেখা দিয়েছে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানবিক বিবেচনায় তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিৎ।

চারমাসের বেশি কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের গেল সপ্তাহে কিছুক্ষণের জন্য অচেতন হয়ে পড়ার খবর প্রকাশের পর তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি। অবিলম্বে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছে তারা।

এদিকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসাপাতালে আনার প্রস্তুতি কারা কর্তৃপক্ষ নিলেও তার আপত্তিতে তা আটকে গেছে। খালেদা ওই হাসপাতালে যেতে না চাইলে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তাতে নারাজ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোগীর আস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের নেত্রীকে ইউনাইটেডেই নিতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে বুধবার বিকালে মালিবাগের চৌধুরীপাড়ায় নিজের বাসায় কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব, যিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন।

তিনি বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া আজ চার মাসের উপরে কারারুদ্ধ অবস্থায় আছেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। তার সুচিকিৎসার প্রয়োজন।

“তিনি একজন বয়স্ক মহিলা এবং বিভিন্ন রোগ তার আছে। দীর্ঘ কারাবাসের ফলে তার এই রোগগুলো আরও জটিল আকারে দেখা দিয়েছে।”

কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়া হয়

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। ওই মামলায় জামিন পেলেও ২০১৫ সালে কুমিল্লায় বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপে আটজনের প্রাণহানির ঘটনার দুই মামলা এবং নড়াইলে মানহানির মামলাসহ কয়েকটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এর মধ্যে কুমিল্লার নাশকতার দুই মামলায় খালেদাকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছিল হাই কোর্ট। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে সাড়া দিয়ে ওই জামিন আদেশ স্থগিত করে চেম্বার আদালত।

সরকার পক্ষ থেকে আপিল করার ফলে আপিল বিভাগ জামিন স্থগিত করে ২৪ জুন তারিখ রেখেছে বলে জানান খালেদার আইনজীবী ।  

তিনি বলেন, “নিম্ন আদালতেও তার কয়েকটি মামলা আছে। এ অবস্থায় আইনি প্রক্রিয়ায় তাকে বের কতে হলে সময়ের প্রয়োজন হবে।”

এই পরিস্থিতিতে খালেদাকে প্যারোলে মুক্তির দাবি জানিয়ে তার পক্ষে দৃষ্টান্ত হিসেবে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শেখ হাসিনার প্যারোলে মুক্তির প্রসঙ্গ তোলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, “সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে দেখেছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ারে তার চিকিৎসা হয়েছিল। এক সময় তাকে বিদেশে চিকিৎসারও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

“শেখ হাসিনাকে যখন প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল তখন সরকারই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু আজকে সরকার অনীহা প্রকাশ করছে যে, তাকে কোনো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে না।”

সরকার ইচ্ছা করলেই খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিতে পারবে না বলেও মনে করেন খন্দকার মাহবুব।

তিনি বলেন, “নো…আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া সরকারের পক্ষেও তাকে এখন ছেড়ে দেওয়া সম্ভব না।

“প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি তার নিজ ইচ্ছায় এবং তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সরকারেরও কোনো দায়দায়িত্ব থাকবে না। ইতোপূর্বে যেটির নজির রয়েছে।”

খালেদা জিয়াকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন কারাভবনের চেয়ে আরও উন্নত পরিবেশে রাখা উচিৎ বলেও মনে করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, “ইতোপূর্বে আরেকটা বিষয় আমরা লক্ষ করছি, সেটি হল দুই নেত্রীকে যখন জেলে নেওয়া হয়েছিল তখন কিন্তু তাদের অত্যন্ত উন্নত পরিবেশে রাখা হয়েছিল।”

“জেলকোড অনুযায়ী যে কোনো স্থানকে সরকার জেল ঘোষণা করতে পারলেও খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে একটি পরিত্যক্ত জেলখানায়। যে কোনো সুস্থ লোকও সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই আমার শেষ আবেদন, আবারও বলছি, আদালত বন্ধ রয়েছে, তাকে সহজে মুক্ত করা আমাদের পক্ষে অসুবিধা আছে।

“তাই তাকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে তার জীবন রক্ষা করা হোক। তার সুচিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হোক।”

বিএনপির পক্ষ থেকে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করা হবে কি না জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব বলেন, “সেটা তো তাদের (সরকারের) ব্যাপার। সেটাতে তো সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। সরকার তো সেটা বলছে না।

“সরকার যদি বলে অবশ্যই করা হবে। তখন রাজনীতিক যারা আছেন, নীতি-নির্ধারকরা সে অনুযায়ী হয়ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”