রোহিঙ্গা সঙ্কট ‘আন্তর্জাতিকভাবে’ সমাধান চান নোমানও

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে আলোচনার বদলে তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে করা উচিত বলে মনে করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2017, 10:18 AM
Updated : 26 Sept 2017, 11:07 AM

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমরা এই কথা বলতে চাই, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মীমাংসা হওয়া দরকার। দ্বি-পক্ষীয় আলোচনার জন্য অনেক কথা আসছে, আমার মনে হয় না দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মিয়ানমারকে তাদের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জায়গায় আনা যাবে।

“তাদের আমরা আহ্বান করলে তারা (মিয়ানমার) আসবে, একথা আমরা মনে করি না। আজকে বিশ্ববাসীর কছে বাংলাদেশের অনির্বাচিত সরকারকে আরো বলিষ্ঠভাবে বলতে হবে যে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে, তাদের যে অধিকার সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।”

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির দেখে আসা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “সেখানে মুসলিম-হিন্দু রোহিঙ্গারা যেভাবে দিন কাটাচ্ছে, এটা মানবেতর জীবন-যাপন। এই মানবেতর জীবন-যাপনে মানুষজন থাকতে পারে না।

“পশুকে যেভাবে আমরা রাখি, যেভাবে যে অবস্থানে রাখি, আজকে রোহিঙ্গারাও সেখানে অধম অবস্থায় দিনকাল অতিবাহিত করছে। এটার পরিবর্তন দরকার।”

দমন-পীড়নের মুখে গত এক মাসে মিয়ানমার থেকে সাড়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

গত শতক থেকে দেশটির কয়েক লাখ শরণার্থীর ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত এক চুক্তির পর সোয়া দুই লাখের মতো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছিল। এরপর আর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগোয়নি।

এবার নতুন করে রোহিঙ্গা সঙ্কটের পর দেশটির নেত্রী অং সান সু চি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে তাদের ফেরত নেওয়ার কথা বলেন।

এরপর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় দুই দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক পক্ষ হিসেবে জাতিসংঘকে রেখে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় করতে সাংবাদিকদের কাছে মত প্রকাশ করেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

রোহিঙ্গাদের ফেরতে ইনুর মতো একই মত প্রকাশ করলেও রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান।

তিনি বলেন, “১০ লাখ রোহিঙ্গা সমস্যায় বাংলাদেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা লক্ষ্য করলাম যে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় নাই। নিরাপত্তা পরিষদে যে দাবি জানানো... বাংলাদেশের পক্ষ থেকে, সেই দাবিও জানানো হয় নাই।

“এই পরিষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার যে ক্ষমতা, যেটা ম্যান্ডেটরি হচ্ছে সমস্ত সদস্য দেশগুলোর- সেই জায়গায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কোনো বক্তব্য রাখেননি। অর্থাৎ আমাদের দেশে যে রোহিঙ্গাদের সঙ্কটটা সৃষ্টি হয়েছে, সেটা নিয়ে আমাদের দেশের নেতৃত্ব খুব একটা বেশি চিন্তাভাবনা করছে না।”

রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ‘দশম কারামুক্তি দিবস’ উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স কক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম।

‘উল্টোপথে গাড়ি রোধে সাজার দাবি’  

উল্টোপথে গাড়ি চালানোর রোধে শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমান।

তিনি বলেন,  “পত্রিকায় দেখলাম, উল্টোপথে ৪০টা গাড়ি চলার কারণে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। ওইসব গাড়ি আওয়ামী লীগের নেতা, সরকারের মন্ত্রী ও সচিবদের। একজন সচিবের কথা আজকের পত্রিকায় উল্লেখও করা হয়েছে।

“দেশের যে আইনের শাসন, যারা আইন রচনা করছেন, তারাই আইন মানছেন না। সচিবরা হচ্ছেন এক্সিকিউটিভ ওয়ার্কে প্রধান। তারা আজকে এই নিয়ম ভঙ্গ করছেন। আমি মনে করি এসবের জন্য শাস্তির বিধান প্রয়োজন। যদি শাস্তি হয় কয়েকজনের, তাহলে অন্যরা সেখান থেকে পেছনে চলে আসবে।”

নোমান বলেন, “রাস্তায় সাধারণ মানুষ সবচেয়ে দোষের মুখে পড়েন বেশি। রাস্তার এদিক থেকে ওদিকে গেলে তাদেরকে পু্লিশ ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু যেসব সচিবের গাড়ি উল্টোপথে গেল, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করল- এটা আমরা জানতে চাই।”

ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা মাইনুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সভাপতি সাইদুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ এবং জাসাস সহসভাপতি শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা বক্তব্য রাখেন।