রোহিঙ্গাদের জন্য ‘সেইফ জোনে’ বিএনপির আপত্তি

রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে সুরক্ষা বলয় (সেইফ জোন) গড়ার যে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে দিয়েছেন তাতে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2017, 03:35 PM
Updated : 24 Sept 2017, 04:10 PM

রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মিয়ানমারের গণহত্যা ও বাংলাদেশের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের এই অবস্থানের কথা জানান।

তিনি বলেন, “আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে সেইফ জোন সম্পর্কে একটা কথা বলেছেন। এটাকে তিনি পরিষ্কার করেননি। এটা হবে আমাদের বাংলাদেশের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, ভয়ংকর, বিপদজনক ও স্বার্থবিরোধী। এই সেইফ জোন কনসেপ্টকে সম্পূর্ণভাবে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।

“আমরা অনুরোধ জানাব, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সেইফ জোন সম্বন্ধে যেন আর কোনো ধরনের কথা-বার্তা না হয়। আমরা একে ষড়যন্ত্রমূলক শব্দ হিসেবে আখ্যায়িত করতে চাই।”

মিয়ানমারে উৎপীড়নের হাত থেকে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় শেখ হাসিনা শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ছয় দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন, যাতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের জন্য সুরক্ষা বলয় (সেইফ জোন) গড়ার প্রস্তাবও রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পাল্টা বিএনপির পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চার দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ।

>> রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে (মিয়ানমার) প্রত্যাবর্তনের জন্যে চাপ সৃষ্টি; রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা ও সমাধানে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।

>> ভিটে-মাটি, সহায়-সম্বল ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।

>> রোহিঙ্গাদের সসম্মানে ফিরিয়ে নিয়ে নাগরিকত্ব দিতে জাতিসংঘসহ সকলকে নিয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর যথাযথ কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

>> বিএনপি সরকারের আমলে ১৯৭৮ সালে ও ১৯৯২ সালের ‘রিপাট্রিয়েশন অ্যাগ্রিমেন্টের’ আলোকে রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে।

আলোচনায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, স্পেন, সোদি আরব, অস্ট্রেলিয়া, মালদ্বীপ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা ও নেদারল্যান্ডের কূটনীতিকরা অংশ নেন। এছাড়া ইউএনডিপি ও ডেমোক্রেটিক ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।

এই গোলটেবিল আলোচনায় শিরোনাম প্রবন্ধ পড়েন সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী যে সেইফ জোনের কথা বলেছে, এটা একটা ফ্যালাসি। আমরা সবাই জানি সেইফ জোন বসনিয়াতে কাজ করে নাই, রুয়ান্ডায় কাজ করে নাই, শ্রীলংকায় কাজ করে নাই, ইরাকে কাজ করে নাই।”

কোফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনের আলোকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চাওয়ায় তারও সমালোচনা করেন তিনি।

“বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোফি আনান রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করেছেন কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে। যদি ব্রিফ করতো তাহলে প্রধানমন্ত্রী এই রিপোর্ট বাস্তবায়নের প্রস্তাব করতেন না। ওই রিপোর্টে কোথাও রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর কথাই লেখা নেই।”

এই অঞ্চলের বৃহৎ দেশগুলো রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী নিধনে মিয়ানমারের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে ‘উগ্র জাতীয়বাদ’ উসকে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খসরু।

সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর পরিচালনায় আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান এম মোরশেদ খান, জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য রিয়াজ রহমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পলিটিক্যাল অফিসার জ্যাকব লেভিন বক্তব্য দেন।

নাগরিক প্রতিনিধিদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হেমায়েত উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব মোফাজ্জল করীম, খান মো. ইব্রাহিম, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করীম, মাহমুদ হাসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাসান তালুকদার, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাইদুজ্জামান প্রমূখ রোহিঙ্গা পরিস্থিতির ওপর তাদের পর্যবেক্ষন তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপি জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম, আবদুল হালিম, গোলাম আকবর খন্দকার, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুল কাইয়ুম, নাজমুল হক নান্নু, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আসাদুজ্জামান রিপন, শ্যামা ওবায়েদ, সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ, আসাদুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার প্রমূখ ছিলেন।