বুধবার সকালে জাতীয় প্রসে ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলের এই অবস্থানের কথা জানান।
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে আমরা অং সান সু চির যতটুকু ভাষণ পড়েছি, তাতে হতাশ হয়েছি। সেই ভাষণ সমর্থনযোগ্য নয়।
“আপনার বক্তব্য মনে হচ্ছে সেখানে (রাখাইন) যারা জুলুম করছে, নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেই সিকিউরিটি বাহিনীর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের অনুরূপ।”
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়।
গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনের সেনা ও পুলিশ চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর থেকে সেখানে চলতে থাকা সেনাবাহিনীর অভিযানে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন সু চি।
ভাষণে তিনি রাখাইনে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানালেও রোহিঙ্গা শব্দটি তিনি উচ্চারণ করেননি; সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও সরাসরি কিছু বলেননি।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া আট লাখ রোহিঙ্গাকে শরণার্থীদের ‘যাচাই করে’ ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন সু চি।
সু চির বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “আপনার বক্তব্যে আপনি বলেছেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পরে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা হয়নি, বন্ধ হয়ে গেছে। আপনি আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত পরিচিত একজন নেত্রী সেই দেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের জন্য। এতবড় মিথ্যা কথা আপনি বললেন কী করে?
রিজভী বলেন, “আপনি (সু চি) একবারও রোহিঙ্গা কথাটি উচ্চারণ করেননি আপনার বক্তব্যে। আপনি বলেছেন সেখানে বসবাসকারী মুসলিম। আপনি তো গণতন্ত্রের নেত্রী নন, আপনি তো সাম্প্রদায়িক। আপনার দেশের রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু মুসলমান, হিন্দুও আছে। এই নির্যাতনের মধ্যে অনেক হিন্দুও নির্যাতিত হয়েছেন এবং বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু আপনি টার্গেট করে বলছেন মুসলিম। এটা তো ভয়ংকর ব্যাপার।”
যাচাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে সু চির বক্তব্য মানবতাবিরোধী উল্লেখ করে রিজভী বলেন, “রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক- এটা সু চি তার বক্তব্যে স্বীকার করেননি। বরং তিনি তাদেরকে শরণার্থী স্ট্যাটাস দিতে চান- সেটা তার বক্তব্যে এসেছে।
“আমরা স্পষ্টভাষায় সু চিকে বলতে চাই, অবিলম্বে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী-ট্রাম্প আলোচনা
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্পের (যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট) সাথে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো আশ্বাস প্রত্যাশা করি না’ অর্থাৎ তিনি বুঝাতে পারেননি। এই বিপন্নতা ও এই অমানবিকতার কথা তিনি আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরতে পারেননি। ট্রাম্পের কাছেও তুলে ধরতে পারেননি। এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতাই শুধু নয়, তার অযোগ্যতা।
“তার (শেখ হাসিনা) যে এত বন্ধু আমরা দেখেছি, আজকে কেউ এই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছেন না। কারণ তিনি সেই নীতি অবলম্বন করতে পারেননি। বরং তিনি দেশের মধ্যে গণবিরোধী নীতি অবলম্বন করেছেন বলে তার কোনো বন্ধু নেই। এত বড় একটি সমস্যা মোকাবেলা করে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে তার (প্রধানমন্ত্রী) কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তার বন্ধুরা আবোল-তাবোল কথা বলছেন, আজেবাজে কথা বলছেন।”
‘জনগণকে ধোঁকা দিতে আতপ চাল’
জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সরকার ‘আতপ’ চাল মিয়ানমার থেকে আমদানি করেছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, “চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার এখন জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য আতপ চাল আমদানি করেছে। এই দেশের মাত্র ৫ শতাংশ লোক আতপ চাল খায়। ওএমএস ট্রাকে ট্রাকে এই চাল বিক্রি করলে নিম্ন আয়ের মানুষরাও যখন দেখছে সেটা আতপ চাল তখন তারা কিনছে না। ট্রাকের মধ্যেই চাল পড়ে থাকছে।
“এটার দুইটি কারণ হতে পারে। এক, আতপ চাল খেতে পারে না এদেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠি। দুই হচ্ছে- মিয়ানমার থেকে আতপ চাল আনা হয়েছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও সু চির ব্যর্থ নীতির কারণে যে রক্তবন্যা বইছে, রোহিঙ্গাদের রক্তের বিনিময়ে আতপ চাল আমদানি করা হয়েছে। এই গণবিরোধী সরকার থাকলে দুর্ভিক্ষ হবে, মহামারী হবে, বন্যা হবে।”
জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেকের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক শাহ নেসারুল হক, কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
‘দেশের নীরব দুর্ভিক্ষ’
চালের মূল্য বৃদ্ধিতে দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ আসছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আরেকটি মানববন্ধন কর্মসূচিতে দুদু বলেন, “দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে, খাদ্য সংকট চলছে। ৭২-৭৫ সালের খাদ্য সংকটের সাথে এর মিল আছে।
“মোটা চালের দাম ৬০/৭০ টাকা হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। সর্বস্তরের মানুষের খাদ্যাভাবে চারিদিকে হাহাকার উঠেছে। এই সরকার সব দিক থেকে ব্যর্থতা পরিচয় দিয়েছে।”
‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে এই মানবন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন কে এম রফিকুল ইসলাম রিপন।
বক্তব্য রাখেন ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।