রোহিঙ্গাদের ত্রাণে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার দাবি বিএনপির

রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা চলছে অভিযোগ করে একাজে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানিয়েছে  বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2017, 11:15 AM
Updated : 17 Sept 2017, 11:36 AM

রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

মিয়ানমারের রাখাইনে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে গত তিন সপ্তাহে ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে এই রোহিঙ্গাদের রাখা হচ্ছে।

কয়েকদিন আগে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিতে গিয়ে কক্সবাজারে স্থানীয় প্রশাসনের বাধা পায় বিএনপি। প্রশাসন বলছে, ত্রাণ বিতরণে ‘সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে’ বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফখরুল বলেন, “সেখানে কোনো ম্যানেজমেন্ট নেই, প্রায় ফেল করে যাচ্ছে। ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

“এই বিশাল সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের অবিলম্বে জাতীয় পর্যায়ে সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোকে নিয়ে আলোচনা করে সকল মানুষকে এখানে সম্পৃক্ত করাটা অত্যন্ত জরুরি।”

কক্সবাজার ঘুরে আসা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, অবিলম্বে দেশি-বিদেশি যত সহযোগিতা ও অনুদান এসেছে, তা সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সেনাবাহিনী নিয়োগ করুন।”

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসনের কাজেও সেনাবাহিনীকে যুক্ত করার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, “মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নাগরিকত্ব দিয়ে সসম্মানে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।”

রোহিঙ্গা ইস্যুকে পুঁজি করে বিএনপি ‘রাজনীতি করছে’ বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদও জানান বিএনপি নেতারা।

মির্জা আব্বাস বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো রাজনীতি নয়, আসুন দল-মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করি।

“জাতীয় দুর্যোগে যখন একসঙ্গে কাজ করা কর্তব্য, তখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ত্রাণ কাজে বাধা প্রদানের মতো নোংরামী থেকে বিরত থাকার জন্য আমি সরকার ও মাথা মোটা মন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিএনপিকে বাধা দিলেও অন্য দলগুলোকে ত্রাণ বিতরণ করতে দিয়ে সরকার দ্বিমুখী আচরণ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।

“১৩ সেপ্টেম্বর আমাদেরকে ত্রাণ বিতরণ করতে বাধা দেওয়া হলেও ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সাহেবকে ত্রাণ বিতরণ করতে এবং মঞ্চ করে ব্যানার লাগিয়ে বক্তৃতা দিতে দেওয়া হয়েছে।”

রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও সহায়তা দিতে বিএনপির পক্ষ থেকে যে কমিটি করা হয়, তার প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন মির্জা আব্বাস।

তিনি জানান, ২২ ট্রাকের ত্রাণ সামগ্রী স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।

মির্জা আব্বাস বলেন, “আমরা সফরকালে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ত্রাণ তৎপরতা দেখলেও সরকার ও আওয়ামী লীগের তেমন কোনো কার্যক্রম দেখিনি।”

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা চাঁদা নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

“মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা অসহায় মানুষদের কাছ থেকে ক্ষমতাসীনদের চাঁদাবাজির খবর শুনেছি। এই অপরাধে যুব লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বর্তমানে কারাগারে আছেন।”

কেন্দ্রীয় ত্রাণ টিমের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগে বিএনপির স্থানীয় ৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার নিন্দাও জানান মির্জা আব্বাস।

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের ‍উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু উপস্থিত ছিলেন।