বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের অবস্থা ও শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে আসা তিন সংগঠন ও জোটের প্রতিনিধি দলের সংবাদ সম্মেলনে এ সমালোচনা করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “শরণার্থীদের নাম লিপিবদ্ধ করা অথবা তারা কোথায় যাবেন- এসব কাজ কেউ করছেন না। শরণার্থী শিবিরে নতুন করে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থা। বৃষ্টির পানিতে সয়লাব বাসস্থান, শৌচাগার নাই, পানি-খাদ্যের ত্রাণের আশায় তাকিয়ে থাকা অসহায় আর্তনাদ।
“নাম তালিকাভুক্তির কথা জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, এ বিষয় সম্পর্কে তারা জানেন না। অনেকে শুনেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসে তালিকাভূক্তির উদ্বোধন করবেন। সুনির্দিষ্টভাবে সরকারি সহায়তার তথ্য কেউ দিতে পারেনি।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এতো বড় সমস্যার সমাধানে সরকার ১৫ দিনে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বিশ্ববাসীর কাছে সত্য হাজির করতে সক্ষম হয়নি। দুই-তিন দিন আগ থেকে তারা তৎপর হয়েছে।
“এর আগে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের বয়ানের উপর ভিত্তি করে অবস্থান ব্যক্ত করেছে। আমাদের বিজিবি রাইফেল তাক করে কীভাবে তাদের ফেরত পাঠাবে সেই চেষ্টায় ছিল। কতজন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে পেরেছে সেটা বলছিল তারা। রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে মিয়ানমার যেভাবে অভিযান পরিচালনার কথা বলেছে, আমাদের সরকারও সেখানে যৌথ অভিযানের কথা বলেছে।”
সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা ও বর্বরতার জন্য মিয়ানমার সরকার ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ উত্থাপনের দাবি জানানো হয় সিপিবি, বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার পক্ষ থেকে।
পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনের ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনগুলোর সাতটি দাবি উত্থাপন করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
তিন সংগঠন ও জোটের সাতটি দাবির মধ্যে আরও রয়েছে- মিয়ানমার থেকে আসা সব শরণার্থীর নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে নিরাপদ আশ্রয়-প্রশ্রয় নিশ্চিত করা; রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করা; গণহত্যা-বর্বরতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সে দেশে ফেরত নেওয়া ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক তদারকি বাড়ানো; রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘের উদ্যোগ বাড়াতে, কফি আনান কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে ও ভারত-চীনসহ অন্যান্য দেশকে পাশে পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো; দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাসহ দেশের জল ও স্থল ভাগের সম্পদ রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে না পড়তে পারে এবং কোনো অপশক্তি যেন তাদের ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ না করতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ।
গত ১১ সেপ্টেম্বর টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যায় এই প্রতিনিধিদল। এ দলে অন্যদের মধ্যে বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা জাহিদুল হক মিলু, কমিউনিস্ট লীগের আব্দুস সাত্তার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকবর খান ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনেও তারা উপস্থিত ছিলেন।