রোহিঙ্গা সঙ্কটের নেপথ্যে অন্য কারণ দেখছেন বামপন্থিরা

শুধু জাতিগত বিদ্বেষ নয়, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর নিপীড়নের পেছনে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের বাম নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2017, 05:21 PM
Updated : 10 Sept 2017, 05:21 PM

রোহিঙ্গা নিপীড়নের প্রতিবাদে রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যৌথ এক বিক্ষোভ সমাবেশে এই সন্দেহের কথা জানান সিপিবি-বাসদ ও গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতারা।

সমাবেশ শেষে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন দেখতে টেকনাফের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে বাম দলগুলোর একটি প্রতিনিধি দল।

এ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে বলে জানান সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম।

রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ঢাকা-টেকনাফ লং মার্চ, মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে আভাস দেন তিনি।

শাহ আলম বলেন, “জাতিগত, ধর্মীয়, জঙ্গিবাদ, মাদক সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলে রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীতে পরিণত করা হচ্ছে। আর সবই করা হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে।

“বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে যে ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চলছে সে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।”

মিয়ানমারে জাতিগত নিপীড়নের শিকার হয়ে ৪ লাখের চেয়ে বেশি রোহিঙ্গা দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশে রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর আরও ৩ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে এদেশে।

রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ মিয়ানমার সরকার। গত ২৫ অগাস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা রাখাইনে পুলিশ ও সেনা ফাঁড়িতে হামলার পর অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সরকার। এই অভিযানে রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে হত্যা ও ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

আগের শরণার্থীর ভারের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জঙ্গি তৎপরতাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণ দেখিয়ে নতুন করে শরণার্থী নিতে অনীহা দেখালেও পরে মানবিক কারণে তাদের আসতে দেয় বাংলাদেশ সরকার।

বাম নেতারা বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও মিয়ানমারকে চাপ না দিয়ে কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশ সরকার সে ষড়যন্ত্রকে পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

পাহাড়ি অঞ্চল রাখাইন তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল আধার বলে ধারণা করা হয়। দেশটির খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে ওই অঞ্চলটিকে তেল-গ্যাস ও কয়লা ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

সিপিবি নেতা শাহ আলম বলেন,  “আরাকান ও বঙ্গোপসাগরের প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে যে ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চলছে, সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে জাতিগত, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে সামরিক জান্তাপুষ্ট সু চি সরকার।”

যারা রোহিঙ্গাদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের আশ্রয় দেওয়ার বিরোধিতা করছে তাদের সমালোচনা করেন বাম নেতারা। পাশাপাশি যারা রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনা ধরে বৌদ্ধসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর উপর হামলার উসকানি দিচ্ছে, তাদেরও সমালোচনা করা হয় সমাবেশ থেকে।

রোহিঙ্গা সমস্যাকে মূলধন করে সাম্প্রদায়িক শক্তি ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বাম নেতারা।

রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় জাতীয়-আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঐক্য গড়ে তোলারও আহ্বান জানান বাম নেতারা। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

সমাবেশে বাসদের (মার্কসবাদী) শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের আব্দুস সাত্তার, সিপিবির কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নজরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।