মিয়ানমারকে থামাতে চীন-ভারতকে বলুন: প্রধানমন্ত্রীকে ফখরুল

রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের আচরণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ মন্তব্য করে দেশটিকে থামাতে চীন ও ভারতের দ্বারস্ত হতে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2017, 12:44 PM
Updated : 10 Sept 2017, 12:44 PM

নির্যাতনের মুখে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে পালিয়ে আসায় সরকারকে সহযোগিতা করতে মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের আহ্বানের প্রেক্ষাপটে রোববার এক আলোচনা সভায় এই পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ মিয়ানমার সরকার। রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে রয়েছেন।

গত ২৫ অগাস্ট রাখাইনে সেনা ও পুলিশ চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেনা অভিযান শুরু হলে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। এর মধ্যে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলি করার পাশাপাশি বাংলাদেশের আকাশসীমাও লঙ্ঘন করে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার।

সরকার রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা সমালোচনামুখর হওয়ার পর শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, সমালোচনা না করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে সহযোগিতা করুন।

একদিন বাদে রোববার আলোচনা সভায় ফখরুল বলেন, “একটি আগ্রাসী শক্তি আজকে আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত করেছে। মিয়ানমার তার নাগরিকদেরকে বিতাড়িত করে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করছে।

“আমরা সরকারকে বলতে চাই, এই সঙ্কট সমাধানে দ্রুততার সঙ্গে কূটনৈতিক সমস্ত প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে। মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই বাধ্য করতে হবে, তারা যেন রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ করে। তারা যেন তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয় এবং এখানে থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।”

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীন-ভারতসহ বিভিন্ন দেশ সফরের পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।

“দরকার হলে প্রধানমন্ত্রীকেই বিভিন্ন দেশগুলোকে যেতে হবে। আজকে ভারত ও চীনের কথা বলা হচ্ছে, তারা মিয়ানমার সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। তাদের কাছে যেতে হবে, তাদেরকে বোঝাতে হবে যে এটা আমাদের জন্য কী ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে আসছে।”

কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া গেলে সমস্যার সমাধান আসবে বলে আশাবাদী ফখরুল।

১৯৭৮ সালের জিয়াউর রহমানের শাসনামলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান সেই সময়ে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কূটনৈতিক কৌশলে চাপ সৃষ্টি করে বার্মা (মিয়ানমার) সরকারকে বাধ্য করেছিলেন সেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে।”

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে দেশের মানুষের উদ্বেগ তুলে ধরে ফখরুল সরকারের বর্তমানের ‘নিশ্চুপ’ ভূমিকার সমালোচনা করেন।

“সরকার কিছুই করছে না। তারা উল্টো ভয় পাচ্ছে যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে না কি জঙ্গিরা চলে আসছে, অস্ত্র আসছে। আমি বলব, মূল বিষয়টাতে আসুন। বার্মা সরকারকে বাধ্য করুন, যেন তারা হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে, নির্যাতন বন্ধ ককরে এবং পাঠিয়ে দেওয়া সমস্ত রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়।”

এই বিষয়টি নিয়ে বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনার জবাবে ফখরুল বলেন, “রোহিঙ্গার ব্যাপারে সরকারের প্রতি আমরা বলেছি, তাতেই তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে, গায়ে জ্বালা ধরেছে।

“আমরা যখন বলি যে যেটা করা দরকার সেটা করছ না। কেন করছে না? তোমরা আসলে যে কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, আমরা জানি না। তোমরা সঠিক সময়ে নেওনি বলেই আজকে এত মানুষ ঢুকে পড়েছে। একটি মাত্র কারণ তোমরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নও।”

ঢকার রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আলোচনা সভায় ফখরুল টেকনাফ ও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়াতে সহযোগী সংগঠনটির প্রতি আহ্বান জানান।

মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সাবেক সাংসদ রওশন আরা ফরিদ, ঢাকা জেলার সাবিনা ইয়াসমীন, নারায়নগঞ্জের রহিমা শরীফ মায়া ও চট্টগ্রামের জেলী চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।