পাকিস্তানে চলে যান: বিচারপতি সিনহাকে হানিফ

প্রধান বিচারপতির রায় ও বক্তব্যে ‘পাকিস্তান-প্রেমের’ প্রকাশ ঘটেছে দাবি করে তাকে দেশটিতে চলে যেতে বলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 11:43 AM
Updated : 22 August 2017, 12:02 PM

এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলার পর তার দলের নেতা হানিফ মঙ্গলবার জোর গলায় বিচারপতি এস কে সিনহার উদ্দেশে বলেছেন, “পাকিস্তানের প্রতি যদি এতই আকর্ষণ থাকে, তাহলে পাকিস্তানে চলে যান।”

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকারের টানাপড়েনের মধ্যে অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধি নিয়ে রোববারের এক শুনানিতে পাকিস্তানের প্রসঙ্গ এনেছিলেন প্রধানর বিচারপতি।

রায়ের বিরুদ্ধে সরকার সমর্থকদের বাদ-প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেছিলেন, “পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করল। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্কতা দরকার।”

ওই কথাকে নওয়াজের মতোই বাংলাদেশের সরকার প্রধানকে অপসারণের হুমকি হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সোমবার বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা সহ্য করা হবে না।

এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ ওই রায়ে জিয়াউর রহমান আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গও তোলেন।

মাহাবুব-উল আলম হানিফ (ফাইল ছবি)

তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতি সাহেব, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনি জিয়াউর রহমান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেছিলেন। পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আছে পাকিস্তানে। পাকিস্তানের প্রতি আপনার এত দরদ।

“২০১৪ সালে নির্বাচনের সময় আপনি নিজেও বলেছিলেন, আমি তো শান্তি কমিটির সদস্য ছিলাম। এর মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? এই বাংলাদেশে যারা রাজাকার, আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন- তারা পাকিস্তানের সৈনিক ছিলেন, সেই হিসেবে আপনি নিজেকে পাকিস্তানের সৈনিক ভাবছেন?”

“আপনার যদি পাকিস্তানের প্রতি এতই আকর্ষণ থাকে, তাহলে পাকিস্তানে চলে যান। সে অধিকার আপনার আছে। চলে যান পাকিস্তানে, কেউ আপনাকে নিষেধ করবে না,” বলেন তিনি।

এস কে সিনহা নৈতিকভাবে প্রধান বিচারপতি পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন বলে ভাষ্য ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার।

তিনি বলেন, “সরকারকে হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই। জনগণ একবার জেগে গেলে পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। বিচারপতি তোমার বিচার করবে এবার জনতা। আপনি নৈতিকভাবে এই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন, জনগণ আপনাকে এই জায়গায় বসা দেখতে চায় না।”

‘কান্নাকাটির জন্য অপেক্ষা করুন’

একুশে অগাস্ট নিয়ে ‘কান্নাকাটির কিছু নেই’ বলে দেওয়া ব্ক্তব্যের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সমালোচনা করে তাদের ‘কান্নাকাটির দিন আসছে’ বলে সতর্ক করেন আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ।

খন্দকার মোশাররফের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নিজেদের অপরাধকে আড়াল করার জন্যই আপনি বলেছেন একুশে অগাস্ট নিয়ে কান্নাকাটির কিছু নেই। আপনাদের অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।

“মোশাররফ সাহেব, আপনাদেরকে বলতে চাই, এর পর কাঁদতে হবে আপনাদের। আদালতের রায়ে যখন আপনাদের লোকেরা অভিযুক্ত হবে, তখন আপনাদেরও কাঁদতে হবে। কান্নাকাটির জন্য অপেক্ষা করুন।”

জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের এই আলোচনা সভায় হানিফ বলেন, “বিএনপি নাকি রাজনীতি করে জনগণের জন্য। কোন মুখে তারা এমন কথা বলে। যেখানে জনগণের ক্ষমতা নিতে চায় হাই কোর্ট, সেখানে তারা খুশি হয়। সেই রায়ে তো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকেও অবৈধ বলা হয়েছে।”