‘জরুরি’ সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনা করার পর জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 August 2017, 08:44 AM
Updated : 22 August 2017, 08:45 AM

মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হবে বলে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।

“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ২১ অগাস্টের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, সেই প্রেক্ষাপটেই এ সংবাদ সম্মেলন।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিলেও সেই সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে সামরিক শাসনের সময় সংবিধানে আসা সুপ্রিম জডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান ফিরিয়ে আনার রায় দিয়েছে আপিল বিভাগ।

অগাস্টের শুরুতে সেই রায় প্রকাশের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা। 

রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সিনহা বাংলাদেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন, যা নিয়ে ক্ষমতাসীনরা তীব্র আপত্তি জানিয়েছে।

সেখানে ‘বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কড়া সমালোচনা করলেও বিএনপি ওই রায়কে বলছে ‘ঐতিহাসিক’।

২১ অগাস্ট উপলক্ষে সোমবার আওয়ামী লীগের আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মত ওই রায় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অনেক অবান্তর কথা এবং স্ববিরোধী বক্তব্য’ সেখানে রয়েছে।

প্রধান বিচারপতির দিকে ইংগিত করে সরকারপ্রধান ওই অনুষ্ঠানে বলেন, “স্বাধীনতা ভালো, কিন্তু তা বালকের জন্য নয় বলে একটা কথা আছে। কাজেই ওই বালক সুলভ আচরণ আমরা আশা করি না।”

আপিল বিভাগের সাত বিচারকের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে ওই রায় এলেও প্রধান বিচারপতির সহকর্মীরা আদৌ রায় নিয়ে তাদের মতামত ‘স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পেরেছেন কি না’- সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘কনট্রাডিকশন’ আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হচ্ছে পার্লামেন্টের মেম্বার দ্বারা। সংসদ সদস্যরাই রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করেন। আর সেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন প্রধান বিচারপতিকে। ওই রাষ্ট্রপতি দ্বারা নির্বাচিত হয়ে, ওই চেয়ারে বসে নিজের নিয়োগের কথা ভুলে গেলেন?... এই কথাগুলো বলার আগে উনার (প্রধান বিচারপতি) ওই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক কথা, অশোভন কথা এবং সকল আইন-কানুন-শিষ্ঠাচার বর্হিভূত কথা।”

আলাল বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে এই কথা প্রত্যাহার করে বিচার বিভাগের কাছে যদি ক্ষমা না চান, আপনি অন্তত আপনার ভোটারদের কাছে মাফ চান। তা না হলে যে কাজ-কর্ম আপনার সরকারের নিচের লেভেল থেকে শুরু হয়েছে, তার চাইতে বেশি অশোভন কথা আপনি গতকালকে বলেছেন।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-হক হানিফের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে এই বিএনপি নেতা বলেন, “হানিফ সাহেবের মাথা এতো গরম যে উনি গতকালকে প্রধান বিচারপতিকে বলেছেন পদত্যাগ করে মাঠে আসুন। ভাবটা হলে যে, সব কাপড় চোপড় খুলে শুধু একটা সকস পড়ে ও বেটা হয়ত হাডুডু খেলতে মাঠে এসেছে। এখন প্রধান বিচারপতিকেও বলছে যে আপনি হাডুডু খেলতে আসেন। দুর্ভাগ্য এই জাতির, খুব কষ্ট লাগে।”

আলাল বলেন, “নিজের মধ্যে বার বার প্রশ্নের উদ্রেক হয়– আমরা কী আসলে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক, নাকি স্বাধীন আওয়ামী লীগের দ্বারা শাসিত একটা দেশ? শুধু তারা স্বাধীন? অন্য কেউ নয়?”

বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে ‘বিচার বিভাগের মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের উপদেষ্টা  মো. আতিকুজ্জামান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।