তিনি বলেছেন, “একজন বিচারপতি হয়ে বিচারালয়ে বসে এত কথা বলার কী প্রয়োজন আছে? আপনি যদি রাজনীতি করতে চান, বিচারলায় ছেড়ে এসে রাজনীতির মাঠে নামুন, কথা বলুন, জনগণ শুনবে।
“সাংবিধানিক ওই পদে থেকে আপনি রাজনৈতিক কথা বলতে পারেন না। আর বলা মানেই সংবিধানের শপথ ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হন আপনি।”
ষোড়শ সংবিধান বাতিলের রায়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে আদালতের রায় মেনে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সরে যাওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধান বিচারপতি।
তার প্রতিক্রিয়ায় সোমবার ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির আলোচনা সভায় ওই কথা বলেন হানিফ।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমরা দেখলাম গতকাল আপনি একটা কথা বলেছেন..আপনি বলেছেন যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সুপ্রিম কোর্ট ইয়ে করেছে। ইয়ে করে দিয়েছে মানে? ইয়ে মানেটা কী? মানে অযোগ্য করে দিয়েছে।
“কী কারণে আপনি পাকিস্তানের রেফারেন্স টানছেন, কোন উদ্দেশ্যে আপনি কথা বলছেন? আপনি তো পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের চেয়ারে বসেন নাই। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে এটা পাকিস্তান নয়, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ। আপনি ইয়ে করতে চান, আপনারা নিজেরা ইয়ে হয়ে যাবেন।”
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরাতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী এনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তা আদালত বাতিল করায় সরকারি দলের নেতাদের মধ্য থেকে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
অন্যদিকে জিয়াউর রহমান আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীনরা রায় বদলাতে বিচার বিভাগের উপর চাপ প্রয়োগ করছে।
বিচারকদের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, “আজকে গুটি কয়েক বিচারপতির কর্মকাণ্ডে, তাদের কথাবার্তায় পুরো বিচার বিভাগকে বিব্রত করছে, জনগণের প্রশ্নের মুখোমখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।”
এই রায়কে ‘ষড়যন্ত্র’র অংশ বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
“নতুন করে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আদালতের মাধ্যমে সেই পথ বোনা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।”
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তার বিচার করতে আদালতের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন হানিফ। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিচার বিভাগীয় তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আজকে সেই বিচারপতির বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত হয় আপনি (প্রধান বিচারপতি) সাংবিধানিক পদে থেকে চিঠি দিয়ে তদন্তের নিষেধাজ্ঞা করেন। এইটা কোন ধরনের নৈতিকতা বহন করে?
“বিচার বিভাগ থেকে রাজনৈতিক কথাবর্তা বলে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি হোক আমরা চাই না।”
২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার ‘পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারও দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা।
“হত্যার জন্য সরকার প্রধান হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া দায় এড়াতে পারে না। বিশেষ করে তার ছেলে তারেক রহমান মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। তেমনি পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া প্রমাণ করেছেন উনিও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।”
অধ্যাপক জুলফিকার রহমানের সভাপতিত্বে এবং মো. জিল্লুর রহমান ভূইয়ার সঞ্চালনায় সভায় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন, সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ডাবলুও বক্তব্য রাখেন।