ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ষড়যন্ত্রকারীদের বড় অস্ত্র: লতিফ সিদ্দিকী

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ষড়যন্ত্রের বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব তা সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 02:59 PM
Updated : 19 August 2017, 02:59 PM

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে রায়ের একথা বলেন আওয়ামী লীগ থেকে সদস্যপদ হারানো এই নেতা।

লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালতের কর্মকাণ্ড ষড়যন্ত্র কিনা, তা ইতিহাসের গবেষণার বিষয় হলেও এই রায় ষড়যন্ত্রকারীদের একটি বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপারটা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

“প্রধানমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সঠিক কৌশল নিলেও অন্যরা ষড়যন্ত্রকে উসকে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন।”

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ‘জাতীয় সংসদ ও বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করেছেন’ অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ সরকারি দলের নেতারা রায়ের কড়া সমালোচনা করছেন। বাক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি সিনহাও।

অন্যদিকে জিয়াউর রহমান আমলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনার এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করে ক্ষমতাসীনদের পাল্টা সমালোচনায় রয়েছে বিএনপি।

রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে এই বাদানুবাদ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “এই ব্যাপারে শোরগোল দেখে আমি বুঝতে পেরেছি, স্বাধীনতা যুদ্ধ- একাত্তরের পক্ষশক্তি ও যুদ্ধাপরাধী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি দ্বন্ধে লিপ্ত হয়েছে।

“১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ফলে যে গোষ্ঠী সুবিধা পেয়েছে, সেই শক্তি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষে আইনি এবং একাডেমিক সমর্থন দিচ্ছে।”

ষোড়শ সংশোধনীকে বাহাত্তরের সংবিধানের প্রতিস্থাপন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন তোলার অর্থই বঙ্গবন্ধুকে আদর্শিক হত্যার জঘন্য প্রচেষ্টা।”

বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়।

পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে বিচারক অপসারণের বিষয় নিষ্পত্তির ভার দিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন।

২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত হয়। আদালতের রায়ে তা বাতিল হওয়ায় আগের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফেরত এসেছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “উচ্চ আদালত সংসদ সম্পর্কে বড়ই অপমানকর মন্তব্য করেছেন। আসলে আক্রমণের লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী... ব্যাপারটা অবশেষে জমে উঠেছে। আপস করে, ছাড় দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ চালাতে পারবেন না।

“আমি দেশের কোনো বিজ্ঞ আইনবেত্তার প্রতিই আস্থা রাখতে পারছি না। যশ-খ্যাতিতে আত্মতুষ্ট কোনো বিজ্ঞ আইনবেত্তা যখন সংসদ সদস্যদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন ধন্ধ লাগে। সংসদ সদস্যদের আবার যোগ্যতা কিসের? সংসদ সদস্য একজন সংসদ সদস্য- এই যোগ্যতাই যথেষ্ট।”

হজ নিয়ে মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সদস্যপদ হারান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। জটিলতার মধ্যে নিজেই সংসদ সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকীও উপস্থিত ছিলেন।