রায়ের পর্যবেক্ষণ আড়াল করতে জিয়ার প্রসঙ্গ টানা: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণের মূল বিষয় থেকে জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে ফেরাতে ক্ষমতাসীনরা জিয়াউর রহমানের শাসনামলের প্রসঙ্গ টেনে আনার কৌশল নিয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2017, 09:44 AM
Updated : 19 August 2017, 10:09 AM

শুক্রবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শনিবার জিয়ার কবরে ফুল দেওয়ার পর সাংবাদিকদের একথা বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের যে সহজাত কৌশল- মূল বিষয়টা থেকে জনমতকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া। উল্টো-পাল্টা কথা বলে তারা (ক্ষমতাসীন দল) অন্য দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।

“আমরা রায় সম্পর্কে বলেছি, পর্যবেক্ষণে বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে যে কথাগুলো আছে, সে সম্পর্কে বলেছি।”

আলাচিত ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বাংলাদেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

এই রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, এই রায়ের ফলে প্রমাণ হয়েছে যে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার যোগ্যতা হারিয়েছে।

বিএনপি নেতাদের মুখে রায়ের প্রশংসার দিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, জিয়ার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং উড়ে এসে জুড়ে বসার কথাও বলা হয়েছে রায়ে। বিএনপি সেক্ষেত্রে এই বিষয়টিও মেনে নিয়েছে।

ফখরুল বলেন, “শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসন যদি অবৈধ হয়ে থাকে, তা হলে আওয়ামী লীগও অবৈধ। কারণ তার (জিয়া) সরকারের সময় তার বিধিমালা অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছিল।”

রায় পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগের উপর চাপ সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে তার নিন্দাও জানান বিএনপি মহাসচিব।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে সংগঠনটির সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলসহ নেতাদের নিয়ে জিয়ার কবরে ফুল দেন ফখরুল। সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সরোয়ার, ইয়াসিন আলী, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাদরেজ জামান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এস এম জিলানী, নজরুল ইসলাম, রফিক হাওলাদার, উত্তরের ফখরুল ইসলাম রবিন, গাজী রেজওয়ান উল হোসেন রিয়াজ উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনের চলমান সংলাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “এই সংলাপের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই বলেছেন, ‘আমরা তাদের কথা শুনব, আমরা কোনো সংলাপ করছি না’।

“সুতরাং এটাকে সংলাপ বলাই যাবে না। উনি শুনবেন, তারপর উনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। এজন্য আমরা বলে এসেছি প্রধান নির্বাচন কমিশনার দল-নিরপেক্ষ নন, তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।”

দলগুলোতে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব কমিশনের নয় বলে সিইসি কে এম নূরুল হুদার বক্তব্যেও আপত্তি জানান বিএনপি মহাসচিব।

“নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সমস্ত দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসা। এটা আমার কথা নয়, আজকের পত্রিকায় দেখবেন, দেশের বিভিন্ন সুধীজন, বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দলগুলো বলছেন নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।”

বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণে সরকার সচেষ্ট নয় বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।

“বন্যায় দুর্গতদের পাশেই দাঁড়াতে আমরাই প্রথম কাজ করছি। সরকার কাজ না করে শুধু মুখের জোরে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এটা আমরা কথা নয়, বন্যার্ত মানুষের কথা যে সরকার দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”