বন্যা দুর্গতদের জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নেই: রিজভী

বন্যা কবলিত এলাকার দুর্গত মানুষের জন্য ‘সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নেই’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2017, 10:21 AM
Updated : 16 August 2017, 10:21 AM

বুধবার দুপুরে এক দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “সারা দেশের বন্যার্তদের জন্য সরকারের ত্রাণ তৎপরতা নেই। উপদ্রুত এলাকা থেকে মানুষকে যে উঁচু জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে, সেটাও কোথাও দৃশমান নেই।”

এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘জরুরি বার্তা’ তুলে ধরে দলের নেতাকর্মীদের উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান রিজভী।

তিনি বলেন, “অসংখ্য মানুষ এখনো পানিবন্দি। তারা যে রান্না করে খাবে, চাল-ডাল দিলেও কোনো কিছু করতে পারছে না। কোথায় রান্না করে নিয়ে যাবে- সেই উপায় নেই। রেল লাইন ভেসে গেছে, রাস্তা-ঘাট ভেসে গেছে।

“দেশের গুদামে চাল নেই, গম নেই। মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। অথচ তারা (সরকার) মুখে তুবড়ি ছুটাচ্ছে, মুখে তুবড়ি ছুটিয়ে এই যে লিপ সার্ভিস… আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বিবৃতিতে বলেছেন, তারা আসল কোনো সার্ভিস দিচ্ছে না, লিপ সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে ওই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।

এতে লন্ডনের মুরফিল্ড আই হাসপাতালে খালেদা জিয়ার ডান চোখে অস্ত্রোপচারের বিষয়টি জানিয়ে তার আরোগ্য কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

মোনাজাতের আগের আলোচনায় আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের সমালোচনা করে তাকে ‘আত্মাবিক্রিকারী মানুষ’ আখ্যায়িত করেন বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী।

বিচারপতি হিসেবে খায়রুল হকের দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “এই ধরনের লোকরা সমাজে থাকলে ন্যায় বিচার থাকবে না, মানুষের নাগরিক অধিকার থাকবে না, মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন হবে না, নারী নির্যাতন হতেই থাকবে। কারণ ওরা তো শেখ হাসিনার কথায় রায় দেন, ওরা বিবেক দিয়ে রায় দেন না। খায়রুল হক শেখ হাসিনার নির্দেশ পালন করেছেন।”

তিনি বলেন, “দেশে এখন তিনটি দুযোর্গ চলছে। একটি শেখ হাসিনা, দ্বিতীয়টি বিচারপতি খায়রুল হক এবং তৃতীয়টি বন্যার প্রাকৃতিক দুযোর্গ।”

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

রিজভী বলেন, “ক্ষমতাসীনরা আজকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে ছুটোছুটি করছেন। আমরা বুঝতে পারছি, তারা এমনভাবে চেষ্টা করছেন যে, যখন এই ভয়ঙ্কর দুঃশাসনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি মানুষের চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাঙ্ক্ষায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছেন, তার মধ্য দিয়ে গোটা জাতির মধ্যে যে আশাবাদ ফুটে উঠেছে, একে ঠেকাবার জন্য ওবায়দুল কাদেররা প্রধান বিচারপতিকে কী পদত্যাগ করতে বাধ্য করছেন, না অন্য কিছু করতে বাধ্য করাচ্ছেন? তার (ওবায়দুল কাদের) দৌঁড়-ঝাঁপ, তার লাফালাফি, ডিগবাজি দেখে মানুষের মধ্যে এই ধারণাই হচ্ছে।”

‘শোকদিবসে ক্ষমতাসীনদের উৎসব’

১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্ষমতাসীনরা ‘চাঁদাবাজি’র মাধ্যমের উৎসব পালন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “যে মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে… পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্ট, সেটার জন্য আমরাও দুঃখ প্রকাশ করি, বলি। কিন্তু শোকাবহ ঘটনা গোটা জাতির ওপর শোকের যে অনুভূতি, তা তো আপনারাই নষ্ট করে দিচ্ছেন।”

“পানের দোকানদারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা, সাইকেলের মিস্ত্রির কাছ থেকে ৩০০ টাকা, মুদির দোকানদারের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা- এভাবে পকেট কাটতে কাটতে গোটা জাতিকে কাঁদাচ্ছেন। এভাবে জোর করে সহানুভূতি আদায় করা যায় না।”

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি দিয়ে আগ্রাসন চালিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি সহানূভূতি আদায়ের চেষ্টার অভিযোগ আনেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

“আপনারা সরকারি কলেজগুলো, স্কুলগুলোয় নির্দেশনা… এটার সময় উপস্থিত থাকতে হবে, না হলে চাকরি থাকবে না। হুমকি দিয়ে, ধামকি দিয়ে আগ্রাসন চালিয়ে আক্রমণ করে নেতার প্রতি সহানুভূতি চাইবেন। আর পিঠের মধ্যে হায় হোসেন হায় হোসেনের মতো হায় মুজিব হায় মুজিব করে তামাশা করবেন। এটা মানুষ গুমরে গুমরে ক্ষোভ প্রকাশ করছে, হাসছে। একটা তামাশা সৃষ্টি হচ্ছে।”

বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, “অন্যের কর্মসূচিতে আক্রমণ করে নিজের নেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে আপনারা সহানুভুতি আদায় করবেন- এটা হয় না।

“সারা দেশ বন্যায় ভেসে যাচ্ছে, মানুষ খাদ্য পাচ্ছে না, ওষুধ পাচ্ছে না- আর আপনারা চাঁদা তুলে, মানুষের পকেট কেটে পাড়ামহল্লায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খিচুড়ি রেঁধে শোক পালনের নামে উৎসব করছেন। এই উত্তেজিত উল্লাস দিয়ে আপনারা মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে পারবেন না।”

মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেত্রী পেয়ারা মোস্তফা ও শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বক্তব্য রাখেন।

এতে মহিলা দলের জ্যেষ্ঠ নেত্রী নুরজাহান ইয়াসমীন, ইয়াসমীন আরা হক এবং ফয়েজুন্নেসাসহ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।