ক্ষমতাসীনদের দ্বারা প্রভাবিত সরকারি কর্মকর্তারা: নজরুল

মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নির্বিবাদে অন্যায় করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2017, 11:19 AM
Updated : 27 July 2017, 11:19 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “সম্প্রতি বরগুনার ইউএনওর ঘটনা নিয়ে যা আমরা দেখছি সেটাতে প্রমাণ হচ্ছে, সরকারি দলের নেতাদের কথায়, স্থানীয় নেতাদের কথায় ডিসি, এসপি, ডিআইজি এবং অন্যান্য কর্মকর্তা যারা, এমনকি বিচারক তারা প্রভাবিত হন এবং অন্যায় করেন। যদি না হতো তাহলে তাদের বদলী করা হতো না, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হতো না।

“এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমরা বলতে চাই, যে দলের নেতৃবৃন্দ, যে দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রভাবের কারণে এত বড় বড় সরকারি কর্মকর্তারা অন্যায় করেন নির্বিবাদে, সেই দলের অধীনে, সেই দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কী করে সম্ভব? কারণ নির্বাচনে তো এসব ব্যক্তিরাই ময়দানে দায়িত্বে থাকবে, ডিসিরা, এডিসিরা, এসপিরা, টিএনওরা, ওসিরা, দারোগারা থাকবে দায়িত্বে।”

নজরুল বলেন, “সারাদেশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়, বিভিন্ন স্থানে এই ক্ষমতাসীন দলের ব্যক্তিদের প্রভাবে প্রশাসন, পুলিশ, এমনকি বিচার বিভাগের কারণে কত মানুষ যে প্রতিদিন নাজেহাল হচ্ছেন, কত মানুষ কত যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, বিপদাপন্ন হচ্ছেন, নিষ্পেষিত হচ্ছেন এই খবর কে রাখে?”

জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ’ এর উদ্যোগে প্রয়াত চিকিৎসক অধ্যাপক এম এ মাজেদের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।

গত গত ৮ জুলাই রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে অধ্যাপক এম এ মাজেদ মারা যান।

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার সম্পর্কে নজরুল ইসলাম খান বলেন, “এ নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে অনেক আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আছেন যারা বিষয়টা বুঝেন, তাদের সবার সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। সকলের মত নিয়েই সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়া হবে। সবার মত নিয়ে দেওয়া হবে বলেই আমরা আশা করি, সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নে আমরা সবার সহযোগিতা পাব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন সঠিক হবে কিনা, কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে দেশের জনগণের কাছে, বর্হিবিশ্বের কাছে তা নির্ভর করছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার ওপর।

“তার কাছে ছোট অনুরোধ করব, আপনি অনেক কাজ করেছেন, এখনও করে যাচ্ছেন। অনেক কাজ প্রশংসাযোগ্য ও অনেক কাজ নিন্দাযোগ্য। এই মুহূর্তে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যদি জাতিকে দিতে চান তাহলে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে একটি নির্বাচনী আবহাওয়া তৈরি করুন, একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করুর। এর কোনো বিকল্প নাই, সেই দিকে আপনি অগ্রসর হোন।”

সভাপতির বক্তব্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, “আজকে দেশ পুলিশ ও আমলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যখনই একটি রাষ্ট্র পুলিশ ও আমলা দ্বারা পরিচালিত হয়, সেই রাষ্ট্রে মেধার কোনো মূল্য থাকে না, সেই রাষ্ট্রে পেশাজীবীদের কোনো মূল্য থাকে না।

“বর্তমান অবস্থায় পেশাজীবীরা যতটা অপমানিত ও উপেক্ষিত হচ্ছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আর কখনো পেশাজীবীরা এতোটা উপেক্ষিত হয়নি। এমনকি স্বৈরাচারী এরশাদের আমলেও হয়নি। এর কারণটা হচ্ছে, এরশাদ তো একজন স্বৈরাচার ছিল। আর বর্তমান সরকার পরিচালিত হচ্ছে একজন ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ও একজন স্বৈরাচারী এরশাদ কর্তৃক।”

সংগঠনের সদস্য সচিব এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, আখতার হোসেন খান, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য আবদুল মান্নান মিয়া, অধ্যাপক এম এ কুদ্দুস, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।