নীলনকশার রোডম্যাপ: বিএনপি

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির কর্মপরিকল্পনায় সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2017, 12:38 PM
Updated : 18 July 2017, 01:07 PM

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “এই রোডম্যাপে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে পুরনো কায়দায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়ার নীল নকশার বাস্তবায়নে তাদের যাত্রা প্রক্রিয়া শুরু করল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।”

নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মঙ্গলবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর আগে গত রোববার নিজেদের কর্মপরিকল্পনা জানায় ইসি; তারা আশা করছে, সব দলের অংশগ্রহণে প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন করতে পারবে তারা।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির মহাসচিব ফখরুল সেদিন তাৎক্ষণিক

প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি সুরাহা না হলে কোনো রোডম্যাপই কাজে দেবে না।

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচন করতে চাইছে।

সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, “এই রোডম্যাপটা তৈরিই করা হয়েছে সরকার যেভাবে নির্বাচন করতে চায়, তাকে সাহায্য করার জন্য। সুতরাং আমরা মনে করি, এখনকার বাস্তবতায় সকল দলের সঙ্গে আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমাদের কথা হচ্ছে, সহায়ক সরকারের ব্যাপারে সমঝোতা করার আগে রোডম্যাপ দিয়ে অগ্রসর হয়ে যাওয়াটায় একটা ষড়যন্ত্র আছে। সরকারের যে নীল নকশা, তার দিকে নির্বাচন কমিশন অগ্রসর হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।”

সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ খুঁজতে ইসির প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

পাশাপাশি নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ গঠনের বিষয়টি নিয়ে সব দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

“আলোচনায় বসুন। এভাবে একতরফা, একগুয়েমি অবস্থানে থেকে দেশের ক্ষতি হচ্ছে, মানুষের ক্ষতি হচ্ছে, গণতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের কাতারে এসে দাঁড়ান, জনগণের চাহিদা পূরণ করুন।”

ইসির রোডম্যাপে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়টিও রয়েছে। তাতে বিএনপি অংশ নেবে কি না- প্রশ্ন করা হলে ফখরুল বলেন, “যখন সংলাপ হবে, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”

‘পরিবেশ নেই’

ইসি নির্বাচনের দিকে এগোলেও ভোটের পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সুযোগ ব্যবহার করে সারা দেশে ঘুরে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

“আমাদের কথা বাদ দিলাম, এই যে রব সাহেব (আ স ম আবদুর রব), তার বাসায় বরেণ্য কয়েকজন ব্যক্তিকে ডাকলেন, সেখানে পুলিশ বাধা দিল। নির্বাচন করবে কারা? রাজনৈতিক দলগুলো তো। সেই রাজনৈতিক দলগুলো তো কাজ করতে পারছে না, সভা-সমাবেশ করতে পারে না, ঘরোয়া মিটিংও করতে পারে না।”

সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়নি দাবি করে ফখরুল বলেন, “নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবার জন্য রোডম্যাপ দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সে ইচ্ছাও তাদেরও নেই।

“তিনি (সিইসি) জনগণকে আরও হতাশ করেছেন এই কথা বলে, বর্তমান সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। তার এই বক্তব্যে সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সরকারি দলের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের প্রতিফলনই ঘটেছে।”

দেশে বর্তমানে ‘রাজনৈতিক ও মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে’ দাবি করে ফখরুল বলেন, এক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ‘সম্পূর্ণ নীরব’।

বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে যে ‘রাজনৈতিক সঙ্কট’ চলছে, তা উপেক্ষা করে শুধু ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের রোডম্যাপ’ সমস্যার করতে পারবে না, বরং আরও ঘনীভূত করবে।

সংবিধানে বাইরে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, “বিষয়টা হল রাজনৈতিক ইস্যু, এটা সাংবিধানিক কোনো ইস্যু নয়। এখানে সংবিধানের কথা বলে কোনো লাভ নেই। সংবিধান মানুষের জন্য, সংবিধানের জন্য মানুষ নয়।”

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি মওদুদ তখনকার উদাহরণ দিয়ে বলেন, “অতীতে যত সমঝোতা আমরা দেখেছি, যেমন ১৯৯১ সালে যে নির্বাচনটা হল। সেই নির্বাচনে কী লেখা ছিল যে, একজন প্রধান বিচারপতি তার অফিস থেকে, তিনি তার পদে থেকে উপ-রাষ্ট্রপতি হবেন, তারপরে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হবেন- এটা কি লেখা ছিল?”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী উপস্থিত ছিলেন।