কমিটিতে ৩৩% নারী: প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপাকে ইসলামী দলগুলো

সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলো এখন সেই শর্ত পূরণ নিয়ে বিপাকে রয়েছে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2017, 04:27 AM
Updated : 18 July 2017, 04:33 AM

নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী ও ধর্মভিত্তিক দল রয়েছে ১১টি। এদের মধ্যে এমন দলও আছে যাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। শর্ত পূরণে তাদের হাতে সময় আছে মাত্র সাড়ে তিন বছর।

এ অবস্থায় ইসলামী দলগুলোর নেতারা বলছেন, বাস্তবতা বিবেচনায় তাদের আরও সময় দিতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বের বিকাশের প্রতি তাদের সমর্থন থাকলেও স্বল্প সময়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টি ‘চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’ বলে তারা মনে করছেন।

২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো।

কিন্তু অধিকাংশ দল গত নয় বছরে লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি। এ অবস্থায় গত ১৩ জুন নিবন্ধিত ৪০টি দলের কাছে ‘নারী প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্তির’ সর্বশেষ তথ্য চেয়ে তাগিদ দেয় ইসি।

এর জবাবে খেলাফত মজলিস ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। তবে কমিটিতে নারীদের আনার প্রতিশ্রুতি তারা পূরণ করতে চায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিশনকে জানিয়েছি- আমরা প্রক্রিয়া শুরু করছি। এ সংগঠনে যেহেতু নারী প্রতিনিধিত্ব নেই; তাই আগামীতে সব কমিটিতে কীভাবে তাদের রাখা যায় এবং মহিলাদের জন্য আলাদা শাখা করার বিষয়ে পরবর্তী সেশনে আমরা আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।”

ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোতে নারী প্রতিনিধিত্ব ৩৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়া ‘খুবই কঠিন’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“ধর্মীয় দলগুলোর জন্যে এ সমস্যাটা বেশি। বাস্তবে অনেক দলেরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা সদস্য কমিটিতে নেই। বাস্তবতা বিবেচনা করে এ সময়সীমা বাড়ানো উচিত বলে আমরা মনে করি।”

বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল এর মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, “ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আমরাই সব থেকে এগিয়ে রয়েছি নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার ক্ষেত্রে। রাষ্ট্রপতির কাছে সংলাপে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম ইসিতে একজন নারী সদস্য রাখতে। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঁচজন নারী।”

আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল নারী প্রতিনিধিত্বের অগ্রগতি জানিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দেবে বলে জানান তিনি।  

ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. আবদুল লতিফ নেজামী বলেছেন, তার দলও ‘শিগগিরই’ ইসিতে প্রতিবেদন দেবে।

“কোনো দলেই তো এখনও ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিরও নেই। আমাদের দেশ রক্ষণশীল। ইসলামী রাজনীতিতে এটা পূরণ করতে সময় লাগবে।”

মাওলানা নেজামী বলেন, “আমাদের নির্বাহী কমিটিতে নারী প্রতিনিধি রয়েছেন। দেশের সব পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব ধীরে ধীরে বাড়ছে। ইসলামী রাজনীতিতে শুধু আমরা বিপাকে রয়েছি তা নয়; বরং চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি, সময় লাগবে।”

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আসন্ন সংলাপে ২০২০ সালের এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর দাবি তোলা হবে বলে জানান তিনি।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব আবুল বাশার মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন জুবাইর জানান, তার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্য থাকলেও তৃণমূলে নেই।

“নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই ৩৩ শতাংশ পূরণ করা কঠিন। কমিশনকে আমরা জানাব, আমাদের দল শর্ত পূরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, তা পূরণের চেষ্টা করব। তবে সেজন্য সময় বাড়ানো প্রয়োজন।”

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুল হক ফারুক জানান, তার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কয়েকজন নারী সদস্য থাকলেও তৃণমূলের কমিটির অনেক পদ খালি রাখা হয়েছে।

“আমাদের দলে নারী সদস্য রয়েছে। কিন্তু তাদের সক্রিয় করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ। সক্রিয় না হলে তো কমিটিতে রেখে লাভ নেই। আগামীতে যোগ্য সদস্যদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারব।”

দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শিগগিরই ইসিতে প্রতিবেদন দেবেন বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক সেলিম মিয়াজি বলেন, তাদের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব থাকলেও এর হার এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। সার্বিকভাবে আগামীতে নতুন কমিটিতে এই প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে চান তারা।

“সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করে নারীদের অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আমরাও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সময় চাইব,” বলেন তিনি।

এছাড়া বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশও রয়েছে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলোর মধ্যে।

ইসির চিঠি পাওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে দলের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়ে জানিয়েছে, তাদের সব স্তরের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী রয়েছেন।

জাকের পার্টির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এজাজুর রসুল নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন, তার দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিষয়টি গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে তারা কাজ করছেন।

জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিবের পক্ষে যুগ্ম সম্পাদক এম সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্য অর্জনে ‘ইতিবাচক’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন লক্ষ্য পূরণে ‘অনেক দূর’ এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ২০২০ সালের মধ্যেই শর্ত পূরণ করা যাবে। তবে তাতে হয়ত সব কমিটি ‘মানসম্মত’ হবে না।

৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত পূরণের সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে দলটি।

বড় দুই দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এখনও ইসিতে প্রতিবেদন জমা দেয়নি। তবে সর্বশেষ কাউন্সিলের আগে বিএনপির কমিটিতে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং জাতীয় পার্টিতে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব ছিল।