নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে ইসির প্রতি আহ্বান ফখরুলের

ঘোষিত রোডম্যাপ সার্থক করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে ‘নির্বাচনের পরিবেশ’ তৈরি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2017, 11:49 AM
Updated : 17 July 2017, 11:49 AM

সোমবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আমাদের খুব পরিষ্কার কথা, আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, আগে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন, রাস্তা তৈরি করুন, তাহলে রোডম্যাপ দেয়াটা সার্থক হবে। অন্যথায় হবে না।

“নির্বাচনে যদি রাজনৈতিক দলগুলোই যেতে না পারে, আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মতো... ওই কুকুর-ছাগল ভেড়া নিয়ে নির্বাচন করতে হবে, মানুষকে নিয়ে তো নির্বাচন করতে পারবেন না।”

বিএনপির সমালোচনার মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে দেড় বছরের কর্মপরিকল্পনা রোববার প্রকাশ করেছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন-ইসি।

নয়া পল্টনে বিএনপির মহানগর কার্যালয়ের মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে ‘বিএনপির ভিশন ২০৩০: নারী সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির মিশন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল।

এতে মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচন কমিশন গতকাল (রোববার) একাদশ নির্বাচনের কর্ম পরিকল্পনা দিয়েছে। খুব ভালো কথা। রাস্তাটা কৈ? ইলেকশন করবে কে? রাজনৈতিক দলগুলোতো। তাদেরকে যে আপনি নির্বাচনে নিয়ে যাবেন, তার রাস্তা কোথায়? হোয়ার ইজ দ্যা রোড।

“ম্যাপ দিয়ে দিচ্ছেন, এই করছেন, ওই করছেন, অথচ রাস্তাই নাই। সারা দেশে রাস্তা তো আপনারা খানা-খন্দক খুঁড়ে শেষ করে দিয়েছেন, প্র্যাকটিক্যালি গোটা ঢাকাতে তাই, বাংলাদেশেও তাই। সেভাবেই নির্বাচনের রাস্তাকে আপনারা খান-খন্দক খুঁড়ে শেষ করে দিয়েছেন। নির্বাচনে যাতে বিরোধী দল যেতে না পারে, তার জন্য আপনারা ব্যবস্থা করছেন।”

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সমস্ত বাদ দিন, পথে আসুন। সব রাজনৈতিক দলের সাথে কথা বলে পথ বের করুন। আমরা বলতে চাই, তারা (ক্ষমতাসীন দল) যে অপকর্ম করেছে, হত্যা-গুম-খুন-জখম করেছে, দুর্নীতি করেছে, লুট করেছে সেখানে তারা পালাবার পথ খুঁজে পাবেনা।

“পালাবার একটাই পথ আছে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তা না হলে সত্যি সত্যি এদেশের মানুষ পালাবার পথ দেবে না।”

রাজনীতিতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপিকে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী করতে পারেন এই নারীরা। গ্রামে আমাদের ভোটার বেশি নারীরা, দেশের সবচেয়ে বেশি ভোটার নারীরা। এটা কেন?

“বিএনপির ধানের শীষ মহিলাদের স্বার্থের কথা ভাবে, মানুষের ভালোর কথা বলে, দেশের ভালো বলে এবং কাজ করে। এই দায়িত্বটা সবচেয়ে বেশি আপনাদের পালন করতে হবে।”

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নির্বাচনে প্রচণ্ড বাধা। এই সরকার চায় না যে, দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। এই সরকার চায় না যে আমরা নির্বাচনে যাই।

“কারণ ওরা জানে যে, আমরা যদি নির্বাচনে যাই আর আমাদের মা-বোনেরা ও ভাইয়েরা যদি ভোট দিতে পারে, তাহলে ওরা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তারা যত অপকর্ম করেছে, চুরি-চামারি করেছে, এগুলো দেখে জনগণ ওদের ভোট দেবে না।”

বিএনপিকে সমাবেশ-সভা করতে দেওয়া হচ্ছে না অভিযোগ এনে এর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “নির্বাচন করার আগে নির্বাচনের পরিবেশ তো তৈরি করতে হবে। আপনি আমাকে রাস্তায় বের হতে দেবেন না, আপনি আমাকে মিটিং করতে দেবেন না, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিটিং করতে দেবেন না, কাউন্সিল করতে দেবেন না।

“এমনকি ‘ভিশন ২০৩০’ আলোচনা করার জন্য জেলাগুলোতে একটা জায়গা পর্যন্ত দেবেন না, ঢাকাতেও দেবেন না। অন্যদিকে আপনি বলবেন যে নির্বাচন করো।”

গত ১৩ জুলাই রাতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনুষ্ঠানে পুলিশি বাগড়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের কথা বাদ দিলাম। এই আ স ম আবদুর রব সাহেব ও অন্যান্য ৫/৪টা দল, ডা. বদরুদ্দোজা সাহেবের মতো মানুষ, ড. কামাল হোসেন সাহেবের মতো মানুষ তারা রাজনৈতিক আলোচনা করার জন্য আবদুর রব সাহেবের বাসা গিয়েছিলেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে উপস্থিত। বলছে, মিটিং করতে পারবেন না।

“আমি এর আগে একদিন বলেছিলাম, এদেশটাকে এরা বাপের তালুকদারি মনে করে। সমস্যাটা এই জায়গায়। যে কারণে ওরাই সব কিছু করবে, মিটিং করবে, ইলেকশন করবে, বিনাভোটে নির্বাচন করবে, ক্ষমতায় যাবে, মন্ত্রী হবে, এমপি হবে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করবে। আমরা-আপনারা ওই সাধারণ মানুষ শুধু হাত তালি বাজাবো, হ্যাঁ বেশ বেশ। এটা হবে না। এটা গণতন্ত্র নয়।”

সবাইকে ‘জেগে’ ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বোনেরা আমাদের সবাইকে জেগে উঠতে হবে। এটা আমার দেশ। জোর করে কেউ নিয়ে যায়, আমি কি ছেড়ে দেব।

“বর্গিরা জোর করে নিয়েছিল, বৃটিশরা জোর করে নিয়েছিল, পাকিস্তানিরা জোর করে নিয়েছিল, আমরা তো যুদ্ধ করে সেখান থেকে ফেরত আনছি। সুতরাং এটাকে আমরা ছেড়ে দেব না। আমরা গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমাদেরকে প্রতিবাদ করতে হবে। সরকারকে বাধ্য করতে হবে সব দলের অংশগ্রহণমূলক একটা অবাধ নির্বাচন করতে দিতে।”

মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি নুর জাহান ইয়াসমীন, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা ফরিদা মনি শহীদুল্লাহ, নুরুন্নাহার, শামুসন্নাহার ভুইয়াসহ অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।