মঙ্গলবার ‘বাকলিয়া উন্নয়ন জনকল্যাণ সমিতি’ নামে নবগঠিত এক সংগঠন আয়োজিত এক সভায় নওফেলকে চট্টগ্রাম-৯ আসন (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত নগর আওয়ামী লীগের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
নওফেল বলছেন, দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে সাংগঠনিক দায়িত্ব হিসেবে ‘নৌকার পক্ষে’ প্রচারের অংশ হিসেবে তার এই কার্যক্রম। আর দলীয় সভানেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করার আগ্রহও তার আছে।
নগরীর কে বি কনভেনশন হলে ওই সভাস্থলের ভেতরে বাইরে ছিল নওফেলের ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন। নৌকা মার্কাসহ দলীয় সভানেত্রীর ছবিও দেখা গেছে ব্যানারে।
জনকল্যাণ সমিতির আয়োজনে সভা হলেও বিকেল ৪টা থেকেই নগরীর বাকলিয়া এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসেন।
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মাহমুদ, ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিসহ ‘মহিউদ্দিনের অনুসারী’ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
সভায় ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে’ কায়সার মাহমুদ এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা আগামী নির্বাচনে নওফেলকে ওই আসনের প্রার্থী হওয়ার আহ্বান জানান।
“আমরা বাকলিয়ার উন্নয়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছিলাম অনেক দিন ধরে। আজ শুরু করলাম। অন্য নেতাদের সাথেও বসব।”
এক প্রশ্নের জবাবে হারুন-অর-রশিদ বলেন, কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনভাগের এক ভাগ ভোট আমাদের। তবুও অনেক সঙ্কট। উনি (নওফেল) যদি এমপি হন আমাদের চাহিদার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেন তিনিই নির্বাচন করবেন।”
এর আগে সভায় হারুন-অর-রশিদ বলেন, অতীতে অনেক মন্ত্রী-এমপি বাকলিয়ার ভোট নিয়ে বাকলিয়াবাসীর সাথে ‘প্রতারণা’ করেছেন।
নওফেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করতে শহরাঞ্চলে প্রচার চালাতে সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যেহেতু তিনি স্থানীয়, তাই বাকলিয়া থেকেই কাজ শুরু করেছেন; এরপর যাবেন টাঙ্গাইল।
“বাকলিয়ার সমস্যা গণমাধ্যমে বারবার এসেছে। তাদের ক্ষোভ-চাহিদা জানতে চেয়েছি, যাতে কেন্দ্র ও প্রশাসনকে জানাতে পারি।”
মনোনয়ন পেলে চট্টগ্রাম-৯ আসনে নির্বাচনে আগ্রহী কি না জানতে চাইলে নওফেল বলেন, “দলের মনোনয়ন বোর্ড ও জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেবেন। যদি আমাকে দেন অবশ্যই করব। অন্য কাউকে দিলেও তার জন্য সর্বাত্মক কাজ করব। জননেত্রী দলের নেতাদের উৎসাহ দিচ্ছেন নির্বাচনের জন্য। মানুষের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে বলেছেন।”
মনোনয়ন পেলে বাবার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগাবেন জানতে চাইলে নওফেল বলেন, “তিনি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। উনার যেমন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আছে, তেমনি নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতিসহ অনেকেরই অভিজ্ঞতা আছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে নৌকার জন্য কাজ করব। ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার বিজয়ই একমাত্র লক্ষ্য।”
২০১০ সালেই বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজনীতিবিদ হওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। চট্টগ্রাম সিটির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ২০১৫ সালের ২০ মার্চ গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নওফেলও উপস্থিত ছিলেন।
ওই সভায় চট্টগ্রাম নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে তিনবারের মেয়র মহিউদ্দিন নিজে প্রার্থিতা থেকে সরে আসেন।
গণভবনের ওই বৈঠকের আগে একান্ত আলাপে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে ছেলে নওফেলের কাছে জানতে চেয়েছিলেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিনই তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘পরবর্তীতে’ নওফেলকে মূল্যায়ন করা হবে।
গত বছর অক্টোবরে দলের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান নওফেল।