রামপাল বিরোধিতায় অনড় বিএনপি

ইউনেস্কো সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে তাদের আপত্তি তুলে নিয়েছে বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হলেও ওই প্রকল্পের বিরোধিতায় অনড় থাকার কথা জানিয়েছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2017, 08:47 AM
Updated : 7 July 2017, 01:29 PM

শুক্রবার সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বাংলাদেশের পরিবেশবিদরা লিখছেন, বলছেন এবং এমনকি ভারতের অনেক পরিবেশবিদরা বলেছেন যে সুন্দরবনের কাছে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলে পরে সুন্দরবন নষ্ট হবে; পরিবেশ, প্রতিবেশ, গাছ-মাছ-পানি ও মানুষ বিপন্ন হবে।

“আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ-বুদ্ধিজীবী আছেন তারা এই বিষয়ে হুঁশিয়ার করছেন, আন্দোলন করছেন। বিএনপি সেই আন্দোলনে সমর্থন করেছে। এখন অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বা অর্গানাইজেশন কে কী বলল, না বলল- এটা দেখার বিষয় নয়। আমরা আজো প্রতিবাদ করি- সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অন্যায়, অবৈধ ও বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দেবার শামিল।”

পোল্যান্ডে চলমান ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম অধিবেশনে রামপাল নিয়ে ইউনেস্কোর আপত্তি তুলে নেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়।

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ঝুঁকিতে থাকা প্রাকৃতিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ থেকেও ইউনেস্কো সরে এসেছে বলে মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পাশে বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে আসছে পরিবেশবাদীরা।

রুহুল কবির রিজভী (ফাইল ছবি)

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতাকারীরা বলছে, এটি হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সঙ্কটে পড়বে সুন্দরবন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের ক্ষতি না করেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে।

নিজেদের ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য নিয়ে এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকেও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গত বছর চিঠি দেওয়া হয় সরকারকে। সরকার সেই চিঠির জবাবও দেয়।

পোল্যান্ডে হেরিটেজ কমিটির যে বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়, তাতে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তারা বৈঠকে সুন্দরবন ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন।

ইউনেস্কোর আপত্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “আমার বাড়িতে আগুন লেগেছে, এই আগুনের তীব্রতা কতটুকু সেটা আমরাই বুঝতে পারব। সেখানে আমি বালতিতে করে পানি ঢালব না দমকল বাহিনী নিয়ে এসে আগুল নেভাব- সেটা আমরা ঠিক করব।”

“আমার দেশের যারা বুদ্ধিজীবী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ তারা কি লেখাপড়া করেননি; এরা কি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি, আনু মুহাম্মদ সাহেব থেকে শুরু করে আরো যারা লিখছেন। এমনকি ভারতেও অনেক পরিবেশবিদ বলছেন যে সুন্দরবনের কাছে কয়লা পুঁড়িয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে পরে আমাদের সুন্দরবন নষ্ট হবে।”

ভারতের অংশেও সুন্দরবন থাকার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী দাবি করেন, “সেখানে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেখানে করেনি।

“হাসিনার মতো একজন দাসনি দাস, একটি গোলাম সরকারকে দিয়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসাচ্ছে। কারণ তারা সুন্দরবন নষ্ট করবে, বাংলাদেশের মানুষকে বিপন্ন করবে, আমাদের গাছ মাছ পানিকে বিপন্ন করবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপিইর ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুকসহ কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ওই মানববন্ধনের আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম।

ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বক্তব্য রাখেন।