সুইস ব্যাংকে জমা বেড়েছে ক্ষমতাসীনদের লুটপাটে: বিএনপি

ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজন দুর্নীতি ও লুটপাট করে জনগণের অর্থ বিদেশে পাচারের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2017, 10:35 AM
Updated : 30 June 2017, 01:08 PM

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই অভিযোগ করেন।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  ২০১৬ সালে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়ে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে ৫৫০০ কোটি টাকার বেশি।

রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, “মূলত দুর্নীতি আর লুটপাটের টাকা সুইস ব্যাংকে পাচার করেছে ক্ষমতাসীনরা। গতকাল অর্থমন্ত্রী সংসদে যে বলেছেন, ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত নাজুক, লালবাতি জ্বলার উপক্রম হয়েছে। সেই ব্যাংক লুটের টাকাই সুইস ব্যাংকে পাচার হয়েছে বলে সবাই বিশ্বাস করে।

“আমি বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচারের জন্য দায়ীদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে একদিন বিচারের মুখোমুখী করা হবে।”

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর ২০০৬ সালে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ।

এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়ায়।

এরপর থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণে ওঠানামা দেখা গেলেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১২ সাল থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। পাঁচ বছরে বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৪২ কোটি টাকার বেশি।

অর্থ পাচারের পেছনে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের লোকেরা জড়িত মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “তা না হলে অর্থমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অসহায়ের ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে না।

“সত্যিকার অর্থে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরা মনে করি।”

এছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশের ঘাটতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে বিদেশে অর্থ পাচারের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করে বিএনপি।

এবারের ঈদ ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক ছিল, কোনো যানজট ছিলো না, যানজট ছিল বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে’ সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন রিজভী।

“‍মন্ত্রী মহোদয়কে সেই পুরনো উদ্ধৃতি দিতে চাই, অন্ধ হলে কিন্তু প্রলয় বন্ধ থাকে না। যানজটের যে বিভীষিকাময় প্রলয়ের ধাক্কা ঘরমুখী মানুষকে পোহাতে হয়েছে, মন্ত্রীর বক্তব্যে মানুষের সেই কষ্টকে উপহাস করা হয়েছে।”

ঈদে ঘরমুখী ও ঈদের পর কর্মস্থলমুখী যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা নিহতদের পরিসংখ্যান নিয়েও মন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, “মন্ত্রী বলেছেন, ঈদে নাকি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০ জন লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। কী অদ্ভূত মিথ্যাচার? তিনি যে ডাহা মিথ্যা বলেছেন, এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে এখন মৃত্যুর মিছিল চলছে। ঈদের আগে ও পরে এখন পর্যন্ত ১২৫ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। শুধু গতকালই (বৃহস্পতিবার) এক পরিবারের ৫ জনসহ সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪ জন।”

“আসলে সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশাই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকে খুশি রাখতে অকপটে মিথ্যার বুলি আউড়িয়ে যাচ্ছেন, এর সাথে সত্যের লেশ মাত্র নেই।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, এম এ মালেক, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ ও তাইফুল ইসলাম টিপু উপস্থিত ছিলেন।