ভ্যাট আইন স্থগিতে ‘অশুভ ইঙ্গিত’ দেখছেন রিজভী

ভোটের আগে ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিতের পেছনে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ‘অশুভ ইঙ্গিত’ দেখছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2017, 01:32 PM
Updated : 1 July 2017, 09:16 AM

সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পাসের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা জানান তিনি।

ভ্যাট আইন কার্যকর করে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নতুন অর্থ বছর থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পিছু হটে দুই বছরের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে।

আর দেড় বছর পরই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ভ্যাট আইন কার্যকর করলে ভোটে তার প্রভাব পড়বে বলে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা বলে আসছিলেন।

রিজভী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত মনে হয়, সরকার আবারও যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতায় আসার খায়েশ পোষণ করছে এবং ক্ষমতায় এসে পুনরায় সেই আইনটি চালু করে জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে বলে মনে হচ্ছে। এই আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত করা অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী।”

বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ।

শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্বে রেখেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে আসছে আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারে শেখ হাসিনাকে বাদ রাখার দাবি জানিয়ে আসছে।

ভোটের আগের বছরে আওয়ামী লীগের দেওয়া বাজেটকে ‘গণবিরোধী’ বলে আখ্যায়িত করেন রিজভী।

“আজকে যে বাজেট পাস হল সেটি গণবিরোধী, উদ্ভট তামাশা। জীবনযাত্রার মানকে নিম্নমুখী করা, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ মানব উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, জনগণের পকেট কাটার বাজেট। আমরা এই প্রতিক্রিয়াশীল বাজেটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “প্রথম থেকে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন ও পাস করা পুরো বিষয়টা হচ্ছে একটা তামাশা। এটা জনগণের কল্যাণের জন্য করা হয়নি, দেশকে স্বাবলম্বী করার জন্য করা হয়নি।

“এটা জনগণের যে সঞ্চিত অর্থ আরও লোপাট করার জন্য এবং এদেশের মানুষকে গরিব থেকে গরিব করার জন্য করা হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, এই বিশাল ঘাটতি বাজেট অলীক ও জনগণকে ধোঁকা দেয়ার শামিল।”

সংসদে বাজেট পাসের আগে প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্যের সমালোচনাও করেন রিজভী।

“প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা কতটা গণতান্ত্রিক যে নিজ দলের এমপিরাও অর্থমন্ত্রীকে ছাড় দেয়নি। তামাশা দেখতে ভালোই লাগে, নাটক, প্রহসন ভালোই লাগে। তবে চক্ষুলজ্জাহীন তামাশা বা অভিনয় মানুষের মধ্যে বিরক্তি তৈরি করে। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের অভিনয় দেখে দেশের মানুষ বিস্মিত ও হতবাক।”

“অর্থমন্ত্রীকে নিজ দলের এমপিদের কটূ বাক্য বর্ষণকে প্রধানমন্ত্রী উৎকৃষ্ট গণতন্ত্রের নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আসলে তা হবে পাতানো একতরফা নির্বাচনে গঠিত ভোটারবিহীন সরকারের পাতানো গণতন্ত্রেরই একটি উদাহরণ,” বলেন রিজভী।

অনুদান নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব অর্থে বাজেট দেওয়ার যে কথা শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সমালোচনাও করেন বিএনপি নেতা।

“এবারই বাজেটেই ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশি ঋণ ৪৫ হাজার ৪২০ কোটি টাকা এবং অনুদান হিসেবে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল ভাঁওতাবাজি।”

বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, “এই সরকার এমনভাবে পরনির্ভরশীল হয়েছেন, এমনভাবে তার রাষ্ট্রনীতিকে সাজিয়েছে যাতে টাকা গড়িয়ে যায় পাশের দেশের দিকে। তাহলে তিনি কীভাবে বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম করেছেন?”

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাদের উপর হামলার প্রতিবাদও জানানো হয়।  

রিজভী বলেন, “ঈদের পর দলের সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন নিজ বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত শেষে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থানা ভবের চরের লক্ষীপুর গ্রামে গেলে সেখানে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালায়। ওই হামলার কামরুজ্জামান রতনের ৯ বছরের পুত্র সন্তানও রেহাই পায়নি।”

স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এসএম জিলানির গোপালগঞ্জের বাড়িতেও পুলিশ হামলা চালিয়ে আসবাপত্র ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

তিনি বলেন, “ভোলার লালমোহন যুবদল সভাপতি শাহীনুল কবিরকে আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য পুলিশ থানায় নিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে এবং পরে রাজি না হওয়ায় তাকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কবির মুরাদ, কেন্দ্রীয় নেতা বদরুজ্জামান খসরু, কামরুজ্জামান রতন, আবদুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, এম এ মালেক উপস্থিত ছিলেন।