বাংলাদেশ কোন দিক থেকে জেগেছে, প্রশ্ন রিজভীর

উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ‘অসাড় ও মূল্যহীন’ আখ্যায়িত করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2017, 07:47 AM
Updated : 27 June 2017, 08:44 AM

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “বাংলাদেশ কোন দিক থেকে জেগে উঠেছে তা জনগণ জানে না। জনগণ শুধু শাসকগোষ্ঠীকেই জেগে উঠতে দেখেছে।

“তারা (ক্ষমতাসীন) জেগেছেন, অর্থে-বিত্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বহু কল-কারখানার মালিক হয়েছেন, ব্যাংক-বীমার মালিক হয়েছেন, কানাডাতে বেগমগঞ্জ পল্লী তৈরি করেছেন, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ডহোম তারা তৈরি করেছেন…।”

সোমবার ঈদের সকালে গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন আনন্দঘন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছে।

“বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ মর্যাদা ফিরে পেয়েছে; যে মর্যাদা হারিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর, আজকে আবার বাংলাদেশ জেগে উঠেছে।”

এর প্রতিক্রিয়ায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য অসাড় ও মূল্যহীন। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ আলোর দিকে নয় বরং অন্ধকারের দিকেই জেগে উঠেছে।”

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজারে কারসাজি এবং ব্যাংক খাতে অর্থ লোপাটের কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। 

“প্রধানমন্ত্রী গতকাল আরও বলেছেন, বাংলাদেশের হারানো মর্যাদার পুণঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, প্রথমবার বাকশালে গুম, খুন আর বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ যে মর্যাদা অর্জন করেছিল, সেটি বর্তমানে দ্বিতীয়বারের বাকশালে পূর্ণমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

রিজভীর ভাষায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ ‘ছায়ান্ধকার, নিস্তরঙ্গ, নিশ্চল ও আতঙ্কময়’ হয়ে উঠেছে।

“জনপ্রতিনিধিরা নয়, পুলিশ এখন জনগণের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। বাংলাদেশকে পরিণত করা হয়েছে একটি ক্রিমিনাল স্টেটে।”

ক্ষমতাসীনরা ‘মিথ্যাচারের মাধ্যমে অন্যায়কে আড়াল করছে’ বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “ক্ষমতাসীনদের টপ টু বটম নেতারা সরকারি অন্যায়কে আড়াল রতে চায় একই মিথ্যা বারবার আউড়িয়ে।”

‘সড়কমন্ত্রীর লিপ সার্ভিস’

ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তির প্রসঙ্গ টেনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ঈদের প্রাক্কালে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণহানিতে এবারের ঈদ দেশের মানুষের জন্য শোক ও কান্নাকাটিতে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়গুলো আমরা বার বার তুলে ধরেছি। যদিও প্রধানমন্ত্রী শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ উদযাপন হয়েছে বলে মিথ্যা দাবি করেছেন।”

সড়ক দুর্ঘটনায় এই প্রাণহানীর জন্য সরকারের ‘উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনাকে’ দায়ী করেন এই বিএনপি নেতা। 

“ঈদে যানজটে ঘরমুখী মানুষের নাকাল অবস্থায় সরকারের কোনো সার্ভিসই ছিল না। তবে যোগাযোগ মন্ত্রীর লিপ সার্ভিসের কোনো কমতি ছিল না।… প্রধানমন্ত্রী যতই শান্তির কথা বলুন না কেন, শান্তি কেবল ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মনে, দেশের মানুষের মন নিরানন্দ বেদনায় ভরাক্রান্ত ছিল, তারা ছিল অনাহারে-অর্ধাহারে বিপর্য্স্ত।”

চালসহ খাদ্যপণের ‘অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে’ মানুষের দুর্ভোগের জন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন রিজভী।

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মিথ্যার বেসাতি ও ক্ষমতার দম্ভ পরিহার করে দেশে স্বস্তি, শান্তি, গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন, নাগরিক স্বাধীনতা, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতি দ্রুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা জরুরি। সেজন্য আজ থেকেই তাকে পদত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না মন্তব্য করে রিজভী বলেন, “ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যদি মনে করে থাকেন যে, শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে, তাহলে তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।