শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্বাধীনতা ফোরামের এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে এই দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ।
আইনি লড়াইয়ে হারের পর গত ৭ জুন রাজধানীর গুলশান এভিনিউর ১৫৯ নম্বর বাড়িটি ছাড়তে হয় মওদুদকে, যেখানে কয়েক দশক ধরে থাকছিলেন তিনি।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর হয়ে আইনি লড়াই চালানো মওদুদ স্বাধীনতার পরপরিত্যক্ত এই সম্পত্তির বাড়িটিতে উঠেছিলেন।
এই বাড়িতে থেকেই জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারে মন্ত্রী হন তিনি। পরে এইচ এম এরশাদের সরকারে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও উপরাষ্ট্রপতিও হয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার সরকারে আইনমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও এই বাড়িতেই ছিলেন মওদুদ।
বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার এক বিঘা ১৩ কাঠা ১৪ ছটাক পরিমাণ ওই জমির মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। তার স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে এর নিবন্ধন ছিল।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ছাড়লে, তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়।
ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ‘ভুয়া’ আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে দুদক মামলা করলে চার বছর আগে শুরু হয় আইনি লড়াই।
মওদুদ সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও রায় তার বিপক্ষে যায়। ফলে তাকে বাড়ি ছাড়তে হয়।
মওদুদ বলেন, “৩৬ বছর ধরে আমি ওই বাড়িতে বসবাস করে এসেছি। আমি সুপ্রিম কোর্টে আর্গুমেন্টের সময় বলেছি যে, আমি জীবনে অনেক ভুল করেছি। কিন্তু তারমধ্যে একটা অন্যতম ভুল হলে যে, আমি ক্ষমতার ব্যবহার করি নাই, অপব্যবহার না।
“আমি এত পদে ছিলাম, আমি ইচ্ছা করলে যে কোনো…। আমাদের রাজউক চেয়ারম্যান কে, আপনারা তো জানেন। আমার এপিএস যদি সই করে বলত, আপনারা এটা ঠিক-ঠাক করে দেন। বাড়িতে এসে সব লিখে-টিকে সব পাকাপোক্ত করে দিয়ে যেত। কিন্তু সেটা আমি করি নাই।”
“করি নাই বলে ভুল করেছি, করি নাই বলে আমি এই অন্যায়-জুলুমের শিকার হয়েছি, প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি,” বলেন মওদুদ।
কেন প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন- তার উত্তরও দেন সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী।
“বিএনপি করি বলে। আমি একথা সুপ্রিম কোর্টে জজ সাহেবদেরকে বলেছি। প্রধান বিচারপতি বললেন, আপনি যদি রাজনীতি না করতেন তাহলে আজকে আপনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন আন্তর্জাতিক আইনজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পেতেন। তিনি নিজেই বললেন, তার মানেটা কী? তুমি রাজনীতি কর বলেই আজকে তোমার এই ভাগ্য, বিরোধী দল কর বলেই এই ভাগ্য।”
ওই বাড়ি ছেড়ে গুলশানের ৮৪ নম্বর রোডে তার এক ফ্ল্যাটে উঠেছেন মওদুদ।
বাড়িটি সরকারি সম্পত্তি নয় দাবি করে তিনি বলেন, “মামলার রায়েও বলা হয়েছে, এটি সরকারি সম্পত্তি নয়, এটা প্রাইভেট। এটা সেই মহিলা যিনি আমার ক্লায়েন্ট ছিলেন, তার বাড়ি।
“তার সন্তান করিম সুলায়মান ঢাকায় এসেছে দেখলাম খবরের কাগজে। সে তার ওনারশিপ, তিনি যে এই বাড়ির মালিক, সেটা দাবি করেছেন এবং দরখাস্ত করেছেন।”
“আমাদেরও বক্তব্য তো তাই, ইটস ইজ মেটার অব টু প্রাইভেট পার্টিজ। সরকারের এখানে কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়, তাহলে কীভাবে সরকারের আপিল কী করে মঞ্জুর করা হয়- এটা আমি জনগণের কাছে ছেড়ে দিলাম বিচার করার জন্য।”
“আপনারা (সরকার) নিজেরা বলছেন, এটা সরকারের সম্পত্তি নয়, যদি তাই হয় তাহলে অ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকা কি থাকতে পারে? প্রতিহিংসা ছাড়া তো আর কিছুই নয়।”
কোনো নোটিস না দিয়ে জোর করে বাড়িটি ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ তুলে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, “দেশে আইনের শাসন নেই, থাকলে আমাকে একটা নোটিস দিত। কোনো আদালতের কোনো নির্দেশ নাই, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নেই, কোনো কোর্টের নির্দেশ ছাড়া, নোটিস ছাড়াকে কাউকে উচ্ছেদ করা বাংলাদেশের প্রচলিত কোনো আইনে নেই।
“যখনই তারা দেখেছে যেখানে তারা আইনের লড়াইতে হেরে যাবে আমার ওই বাড়িতে থাকার ব্যাপারে, তখনই তারা ঠিক করেছে জোর করে ব্রুটাল ফোর্স দিয়ে ওই বাড়ি দখল হবে, সেটাই তারা করছে।”
“এর একদিন অবশ্যই বিচার হবে। যদি ইহকালে না হয়, ইনশাল্লাহ পরবর্তী জীবনে এর বিচার অবশ্যই হবে,”বলেন মওদুদ।