প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষায় অর্থমন্ত্রী হলেন বেকুব-রাবিশ: রিজভী

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে ‘তামাশা’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2017, 12:11 PM
Updated : 22 June 2017, 12:11 PM

ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক ও ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সমালোচনার মধ্যে তাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে বলছেন এ বিএনপি নেতা।

সংসদের ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ‘ভ্যাট আইন’ বাস্তবায়ন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা খবরের পর বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়া জানান রিজভী।

তিনি বলেন, “বিতর্কিত ভ্যাট আইন স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী; অদ্ভূত ব্যাপার, সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তারপরে সংসদে যায় বাজেট, বাজেটে অর্থবিল একটা আইন; এই বিল যাওয়ার আগে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন হয়। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, এটি ক্যাবিনেট মিটিংয়ে অনুমোদন হলো কীভাবে?

“প্রধানমন্ত্রীর ইমেজ বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে জনগণের সঙ্গে চলছে তামাশা, চলছে নাটক। সরকার চোরকে বলছে চুরি করতে আর পুলিশকে বলছে ধরো ধরো। প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীকে বেকুব ও রাবিশে পরিণত করা হয়েছে।”

গত ১ জুন বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে ভ্যাট এবং ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক নিয়ে সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের সমালোচনা সইতে হচ্ছে মুহিতকে। এমনকি মন্ত্রীদের মধ্যে কয়েকজনও সংসদে দাঁড়িয়ে বাজেটের সমালোচনা করেছেন, যদিও তাদের উপস্থিতিতেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাস হওয়া বাজেট উপস্থাপন করেছেন মুহিত।

জাতীয় পার্টির দুই জ্যেষ্ঠ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও কাজী ফিরোজ রশীদ মঙ্গলবার সংসদে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করতে গিয়ে তার বয়স নিয়েও কথা বলেন এবং পদত্যাগ দাবি করেন।

অবশ্য বুধবার সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অর্থমন্ত্রীর সমালোচনার জবাবে সরব হলে বৃহস্পতিবারের অধিবেশনে তার পক্ষে অন্য সহকর্মীদের পক্ষেও দাঁড়াতে দেখা যায়।

ইতোমধ্যে কয়েকবার বিভিন্ন মাধ্যমে আবগারি শুল্কের হারে হেরফের কথা জানালেও ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে নিজের অবস্থানে দৃঢ় থাকার তা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী।

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ভ্যাট আইন স্থগিত সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এই দৃঢ়তার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষায় এখন তাকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

তিনি বলেন, “অর্থমন্ত্রী কিন্তু স্টিক ছিলেন যে, না... এই আইন বলবৎ করতে হবে, এক লক্ষ টাকা, বড় টাকা। সুতরাং উনি এক কথা বলছেন, উনার দলের লোকজন আরেক কথা বলেছেন। আবার প্রধানমন্ত্রী এখন সেই ভ্যাট আইন স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে রক্ষা করার জন্য..., না... তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জনগণের সাথে আছেন, তিনি এটার প্রতিধ্বনি করেছেন।

“প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেটের ওপরে মন্ত্রিপরিষদের যে বৈঠকটি হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী আগে কি জানতেন না যে এটা জনগণের ওপর চরমভাবে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। সেজন্য আমরা বলেছি একটা তামাশা করা হয়েছে। এখন অর্থমন্ত্রীকে বলির পাঁঠা বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে রক্ষা করাই হচ্ছে তাদের (সরকার) মূল লক্ষ্য। সত্যিকার অর্থে জনগণের দুর্ভোগ কমাতে তারা কোনো কাজ করছেন না।”

রিজভী বলেন, “ভোটারবিহীন সরকার মনে করে, আমরা যে ছলনাই করি না কেন... জনগণ কিছুই যেন উপলব্ধি করতে না পারে।  জনগণকে মনে হয়, রিপ-ভ্যান উইঙ্কেলের মতো সমসময় নিদ্রা মগ্ন থাকে। সেই কারণে তারা অনাচার আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পরিকল্পিত নাটক সাজিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।

“বাজেট নিযে সরকারের যে তামাশা, তাতে তারা কোনো গভীর সত্যকে লুকোতে চেষ্টা করছে।”

‘জনদুর্ভোগের সরকার’

ঈদে ঘরমুখে যাত্রায় মানুষকে দুর্ভোগ মুখে পড়তে হচ্ছে দাবি করে সরকারকে ‘জনদুর্ভোগের সরকার’ বলে আখ্যায়িত করে বিএনপি নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, “এই সরকার হচ্ছে জনদুর্ভোগের সরকার। ঈদে ঘরমুখী মানুষের দুর্ভোগের কোনো সীমা নেই। ঢাকার চারিদিকে সকল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে যাত্রীদের নাকাল অবস্থা। এর মূল কারণ হলো- রাস্তাঘাট খানাখন্দকে ভরা।

“বৃষ্টির পানিতে খানাখন্দক ভরে এখন খালে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কগুলোয় দীর্ঘ যানজটে মানুষের ভোগান্তি চরম বেড়েছে, এটা সরকারের চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। মন্ত্রীরা বাগাড়ম্বর কথা বলে যাচ্ছেন, কিন্তু দেশের উন্নয়নের কোনো চিহ্ন নেই।”

গণমাধ্যমের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে সারা দেশে সড়ক-মহাসড়কের ৭৫ হাজার কিলোমিটারেরই বেহাল দশা দাবি করে রিজভী বলেন, “এগুলো সরকারের দুর্নীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোশালপুর গ্রামে বিএসএফের গুলিতে দুই কিশোরকে নিহতের ঘটনায় সরকার ‘নিশ্চুপ’ রয়েছে অভিযোগ করে সমালোচনা করেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।