ফখরুলদের উপর হামলাকারীরা গ্রেপ্তার হল না কেন: খালেদা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2017, 03:42 PM
Updated : 18 June 2017, 03:42 PM

রোববারে সকালে চট্টগ্রামে হামলার পর সন্ধ্যায় ঢাকায় এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, “আমি জানতে চাই, মহাসচিবের উপর এই হামলা হল, তারপর কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? অথচ আমাদের লোকজন কিছু না করলেও সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।”

পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালীতে রোববার সকালে বিএনপির প্রতিনিধি দলের গাড়িবহরে হামলা হয়।

সেখান থেকে চট্টগ্রাম ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা এই হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

খালেদা বলেন, “আজকের এই হামলার ঘটনায় প্রমাণ হল দেশে যত সন্ত্রাস, যত বিশৃঙ্খলা, যত অরাজকতা- সব আওয়ামী লীগ করেছে।”

হামলাকারীদর গ্রেপ্তারের দাবি করে তিনি বলেন, “ওদের ধরতে হবে, শাস্তি দিতে হবে, জেলে পুরতে হবে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

এই ঘটনাটিকে সারাদেশে মানুষের নিরাপত্তাহীনতার নজির হিসেবে তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

“বিএনপি যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে অন্য মানুষরা কী করে নিরাপদ থাকবে। যখন তখন মানুষের উপর হামলা হচ্ছে, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় না।”

আওয়ামী লীগকে দেশের মানুষ চায় না দাবি করে তিনি বলেন, “দেশের মানুষ খেতে পারবে না, শুধু ট্যাক্স দিতে হবে, ভ্যাট দিতে হবে, অমুক দিতে হবে, আওয়ামী লীগের মার খেতে হবে, মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় বন্দি থাকতে হবে। নাহলে এই গুম-খুনের শিকার হতে হবে। এগুলো মানুষ চায় না।”

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ তুলে খালেদা বলেন, “এদের কোনো নীতি নেই, এদের কোনো আদর্শ নেই। এরা লুটপাট ছাড়া কিছু জানে না।

“চুয়াত্তর সালে এই করে মানুষকে না খাইয়ে দুর্ভিক্ষ করেছিল। অথচ তারা নিজেদের সকলের সোনার মুকুট পড়ে একেক জনের বিয়ে হয়েছে, আপনারা তা দেখেছেন।”

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সব দলকে এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান খালেদা।

“এই আওয়ামী লীগ থেকে সাবধান হন, এদেশেকে বাঁচান। একসঙ্গে সকলে মিলে যেটা আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি হবে, সেই কর্মসূচি দিয়ে আমরা এদেরকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করব।”

“প্রয়োজনে রাজপথে অবস্থান নিতে হবে নিজেদের। রাজপথে অবস্থান নেওয়ার সময় আসবে ঈদের পর,” বলেন তিনি। 

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দেন খালেদা।

“আমি দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলতে চাই, হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে নির্বা্চন দিলে সেই নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করবে না, সেই নির্বাচন দেশে হতে দেওয়া হবে না।”

ঈদের পরে নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকারের’ রূপরেখা দেবেন বলেও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

২০ দলীয় জোট শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) এই ইফতার অনুষ্ঠানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।

জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, ইসলামী ঐক্যজোটের এম এ রকীব, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার রেহানা প্রধান, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, পিপলস লীগের গরীব নেওয়াজ, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শেখ মজিবুর রহমান, খেলাফতে ইসলামীর আহমেদ আলী কাশেমী, বিজেপির আবদুল মতিন সউদ, কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান তামান্না।

জাতীয় পার্টির নেতাদের মধ্যে ছিলেন এসএমএম আলম, আহসান হাবিব লিংকন, নবাব আলী আব্বাস খান, আনোয়ারা বেগম, মাওলানা রুহুল আমিন, জাফরুল্লাহ খান চৌধুরী, সেলিম মাস্টার, শফিউদ্দিন ভুঁইয়া, কাজী মো. ইকবাল, মো. শরিফউদ্দিন, এএসএম শামীম, কাজী ফয়েজ, সোলায়মান শামীম, প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদের বড় মেয়ে কাজী জয়া।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাসান উদ্দিন সরকার, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ।