নৌকা ডুবে গেছে: খালেদা

দলের নেতাকর্মীদের ভোটের প্রস্তুতি নিতে বলার কয়েক দিনের মাথায় খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা ‘ডুবে গেছে’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2017, 03:17 PM
Updated : 17 June 2017, 03:40 PM

“এই নৌকাকে আর আপনার হাজার লোক দিয়েও টেনে তুলতে পারবেন না,” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বলেছেন তিনি।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করে আড়াই দশক পর সংসদের বাইরে চলে আসে বিএনপি। এরপরও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে তারা।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। এর অন্যত্থায় হওয়ার সুযোগ নেই।    

পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলার মধ্যে সম্প্রতি এক ইফতার অনুষ্ঠানে দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

শনিবার ২০ দলীয় জোটের এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “নিজেরা হেলিকপ্টারে বিভিন্ন জায়গায় উদ্বোধনের নামে যাচ্ছেন, কিছু উদ্বোধন করছেন। আর সেখানে ওরা নির্বাচনী ক্যাম্পেইনের নামে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। নৌকা যে ডুবে গেছে- এটা বুঝতে পারছেন না।

“নৌকার সঙ্গে যাদের রেখেছেন, আশপাশে যারা আছে, আপনার ডানে-বায়ে যারা আছে, যারা অন্য দল করে আপনার দলে এসেছে-তারা কী জিনিস? আপনি কিন্তু নিজেই বলে দিয়েছেন তারা কী খায়, কী রকম তাদের লাইফস্টাইল। এসব লোককে দিয়ে দেশের কিছু হবে না, এরা দেশের কিছু করতে পারে না। আপনিও পারবেন না।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, “নির্বাচন হতে হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, হাসিনার অধীনে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। কোনো দল অংশগ্রহন করবে না। হাসিনাকে বাদ দিতেই হবে, ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতেই হবে।”

নির্বাচনে জনগণের সমর্থন চেয়ে বিএনপি প্রধান বলেন, “আমি জনগণের উদ্দেশ্যে বলতে চাই. আওয়ামী লীগের চেহারা আপনারা ভালোভাবে দেখে নিয়েছেন। তাদের হাত থেকে বাঁচতে চান, সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যারা গণতন্ত্রের পক্ষে, গরিব-সাধারণ মানুষের পক্ষে, সমস্যা-সমাধানের পক্ষে, দেশের শান্তি-উন্নয়নের পক্ষে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে, তাদের পক্ষে থাকুন।

“সেই রকম দলই হলো বিএনপি ও ২০ দল, যাদের দেশপ্রেম আছে, প্রতিটি মানুষের সাথে সম্পর্ক আছে।”

‘সহায়ক সরকারের’ অধীনে ভোট হলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট জয়ী হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “জিতে এসে এদেশের মানুষকে যা যা ওয়াদা করেছি আমরা আমাদের ভিশন ২০৩০- এ। সব কিছু করব, আরও কিছু করার আছে, সেটাও করব।”

মহাসড়কের ‘দুর্বস্থায়’ ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেত্রী। মহাসড়কে পাবলিক টয়লেট করার কথা বলেন তিনি।

পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকার যথাযথ ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে যেভাবে ভূমি ধসে মানুষগুলো মারা গেল, তাদের উদ্ধার করা, তাদের পুনর্বাসনে বর্তমান সরকারের কোনো চিন্তা-ভাবনা আমরা দেখছি না, কোনো দায়িত্ববোধও দেখছি না।”

এই ঘটনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সমালোচনা খালেদা জিয়া বলেন, “জনগণের নয়, আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত। যেখানে চট্টগ্রামে, রাঙামাটিতে ঘটনা ঘটল সকাল ১০টা কত মিনিটে, সেটা জানার পরও বেলা ১২টা কত মিনিটে হাসিনা দেশত্যাগ করলেন।

“কেন? দেশে এত বড় ঘটনা, এখন পর্যন্ত ১৫২ জন মারা গেছে, আরও হয়ত মারা যাবে কিংবা অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এত বড় ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বিদেশে যান? এটা কি জনগণের প্রতি তার (শেখ হাসিনা) দায়িত্ববোধ? আজকে (শনিবার) তিনি দেশে ফিরেছেন। এসে  মায়াকান্না দেখবেন হয়ত।”

চাল ও অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি নিয়েও সরকারের সমালোচনা করেন বিএনপি প্রধান।

গুলশানের ইমানুয়েল সেন্টারে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা’র প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।

গত ২১ মে শফিউল আলম প্রধান মারা যান। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে খালেদা জিয়াসহ জোট নেতারা মোনাজাতে অংশ নেন।

জাগপার সভানেত্রী রেহানা প্রধানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জোট নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তাজা, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এমএ রকীব, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় ২০ দলীয় জোটের শরিক মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার চৌধুরী বুলবুল, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভার পর মূলমঞ্চে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাগপার সদ্য প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানের সহধর্মিনী অধ্যাপক রেহানা প্রধান, তার মেয়ে ব্যারিস্টার তাহমিয়া প্রধান, সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার লুৎফর রহমানসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।

ইফতারে জাগপার জ্যেষ্ঠ নেতা আসাদুর রহমান খান, আবু মোজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, রাকিব উদ্দিন চৌধুরী মুন্না, খন্দকার আবিদুর রহমান, নিজামউদ্দিন অমিত, শেখ জামাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা বেলায়েত হোসেন মোড়ল, শেখ ফরিদ উদ্দিন, নজরুল ইসলাম বাবলুসহ নেতৃবৃন্দ ইফতারে ছিলেন।