খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি ফখরুলের

চালের দামের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারের ‘অদক্ষতা ও দুর্নীতি’কে দায়ী করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2017, 10:29 AM
Updated : 17 June 2017, 10:29 AM

শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আজকে দেশে অত্যন্ত এলার্মিং সিচুয়েশন- আমাদের খাদ্য মজুদ যেটা আজকের পত্রিকাতে আছে, মাত্র ১ লাখ ৯১ হাজার টনে এসেছে।

“কেন? সরকারের দূরদর্শিতার অভাব। সরকারের দুর্নীতি ও তাদের অদক্ষমতার কারণে এই অবস্থায় চলে এসেছে। আমি বলতে চাই, চালের দাম যেভাবে বেড়েছে অশনি সংকেত। আমার মতে এজন্য সরকারই দায়ী। খাদ্যমন্ত্রীর উচিৎ পদত্যাগ করা..., নতুন খাদ্যমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া।”

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের এক বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এখন চালের দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তারা স্বীকার করতে চায় না, ভয়ে বলতে চায় না উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে।

“খাদ্যমন্ত্রী গতকাল (শুক্রবার) বলেছেন যে, অসাধু ব্যবসায়ী আর বিএনপির ব্যবসায়ীরা না কি চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজের অযোগ্যতা ও দুর্নীতিকে ঢাকার জন্য সব কিছু উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।”

রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের উদ্যোগে ‘বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন ২০৩০: যুব সমাজের ভাবনা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়।

এতে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের সমস্ত ভবিষ্যৎকে, আমাদের স্বপ্নগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। পদ্মা সেতুতে যে দুর্নীতি হচ্ছে তা বোধহয় অতীতে কোনো নজির এখানে নেই।

“আবার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২৩ পার্সেন্ট বাড়ানোর প্রস্তাব তারা করেছে। প্রতিদিন, প্রতিবছর এটা বাড়তেই আছে, দুর্নীতি বাড়তেই আছে। এই সরকার দুর্নীতির মাধ্যমে, দখলদারিত্বের মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে।”

একে ‘রাজনৈতিক সঙ্কট’ আখ্যায়িত করে উত্তরণে সহায়ক সরকারের অধীনে ও নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন ও শওকত মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোরত্তাজুল করীম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আরেক আলোচনা সভায় চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারকে দায়ী করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও।

ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত ওই সভায় তিনি বলেন, “আজকে মোটা চালের দাম ৫০ টাকা। সরকারের কি পরিমাণ ব্যর্থতা ও খামখেয়ালির জন্য খাদ্য নিরাপত্তার যে গ্যারান্টি থাকার কথা তা নেই, খাদের গুদামগুলো খালি।

“আমি পত্রিকায় দেখেছি খাদ্যমন্ত্রী নাকি বলেছেন, চালের দাম এত বেশি না, সাংবাদিকরা-মিডিয়া এসব সৃষ্টি করেছে। তার এই বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা নিন্দা জানাই মন্ত্রীর এই বক্তব্যকে। আমি বলতে চাই, চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারই দায়ী।”

সরকারের নিজেদের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে নানা ফন্দি-কৌশল করছে বলে অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ।

পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক নিহতের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সুইডেন সফরের সমালোচনাও করেন এই বিএনপি নেতা।

শামীম ইশতিয়াক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ ও আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন।

‘দুদককে নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ফাইল ছবি)

রমনায় আলোচনা সভার আগে সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদককে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “দেশ একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। শাসকগোষ্ঠী আজকে রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করছে তাদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবার জন্যে। দুর্নীতি দমন কমিশন একটা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা। সেই প্রতিষ্ঠানকে সরকার ব্যবহার করছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।”

আমার দেশ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজা মাহমুদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ওই মানবন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

এতে আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও তার স্ত্রী পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজা মাহমুদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুদকের মামলাকে ‘বেআইনি’ আখ্যায়িত করে প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “দুদকের এই মামলা দায়ের কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের চিত্রই হচ্ছে এটা। উদ্দেশ্যটা হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব অথবা পেশাজীবী নেতৃত্ব, অথবা একজন স্বাধীন মানুষ যারা মুক্ত কথা বলেন, সরকারের সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন, তাদেরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্যই সরকার এইসব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে, মামলা দিচ্ছে।”

কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে মাহমুদুর রহমান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের প্রধান সেলিম ভুঁইয়া, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম ও আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তব্য রাখেন।