বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ‘সুর বদল’ দেখছেন খালেদা

ভারতের ‘সমর্থনে’ ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ‘একতরফা নির্বাচন’ করতে পারলেও পরিস্থিতি এখন বদলে গেছে বলে মনে করছেন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2017, 03:20 PM
Updated : 15 June 2017, 03:30 PM

এই রোজায় গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বলে আসছিলেন, বিএনপিকে বাইরে রেখে একাদশ সংসদ নির্বাচন করতে পারবে না সরকার।

বৃহস্পতিবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে তার আশাবাদী হওয়ার কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের এক ইফতার অনুষ্ঠানে খালেদা বলেন, “২০১৪ সালে নির্বাচন হয় নাই। কেউ ওই নির্বাচনে স্বীকৃতি দেয় নাই, একমাত্র আমাদের প্রতিবেশী দিয়েছে।

“কিন্তু এবার তাদের (প্রতিবেশী দেশ) সুরটাও একটু বদল। তারা বুঝেছে, তারা ভুল করেছে, ঠিক করেনি। সেজন্য এবার বিএনপি যদি না যায়, ২০ দল যদি না যায়, এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ একলা নির্বাচন করতে পারবে না।”

নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে না নেওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল।

ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেন, ভারতের সমর্থনেই এই সরকার টিকে আছে।

তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ভারত বরাবরই বলে আসছে, বাংলাদেশে নির্বাচন বাংলাদেশেরই অভ্যন্তরীণ বিষয়।

বিদেশিদের চোখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত বিএনপির নেতারা গত কিছু দিন ধরে বলে আসছেন, প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। ভারতকে তারা বন্ধু রাষ্ট্রই মনে করেন।

ভারতকে বাদ রেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ‘নতজানু পররাষ্ট্র নীতির’ সমালোচনাই এখন বেশি করছেন বিএনপি নেতারা।

ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে কয়েক মাস আগে বৈঠকে খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার সমালোচনা করে খালেদা বলেন, “দেশের যে অবস্থা বিরাজমান, মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠেছে, দেশে অবিলম্বে নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।”

‘নির্বাচনকালীন’ সরকারের দাবি ক্ষমতাসীনদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ও ২০ দল নির্বাচনে যাব। আমরা বিশ্বাস করি, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা জিতব। সেজন্য আমরা বলতে চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচনটা তখনই সম্ভব, হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে।”

১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগের দাবি মেনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে স্থাপনের কথা জানান তিনি, যা আওয়ামী লীগ আমলে বাতিল হয়।

খালেদা বলেন, “তখন তত্ত্বাবধায়ক নাম ছিল, এখন যে কোনো নাম দিতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবে না, হতে পারে না।”

এখন ভোট হলে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ‘আরেকবারের মতো শিক্ষা দেবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের ছোট ছোট নেতারা বুঝতেছেন সময়টা কিন্তু সামনে ভালো নয়।

“বড় নেতারা তাদের ব্যবস্থা করেছে, পকেটে টিকেট নিয়ে ঘুরছে। অবস্থা দেখলেই তারা উড়াল দেবে, আপনাদের (ছোট নেতারা) দিকে চাইবে না ফিরে।”

প্রধানমন্ত্রীর সফর ‘আনন্দ ভ্রমণ’

পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের বিপর্যয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুইডেন সফরের তীব্র সমালোচনা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন, পাহাড়ধসে ১৫৫ জন লোক মারা গেছে, আর্মির লোকজনও সেখানে মারা গেছে, এখনও অনেক নিখোঁজ রয়েছে।

“আর আওয়ামী লীগের নেত্রী এখন প্লেজার ট্রিপে আছেন, আনন্দ ভ্রমণে আছেন। তার দেশের মানুষের প্রতি কোনো মমতা নেই।”

‘দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত’- শেখ হাসিনার এই কথা উদ্ধৃত করে খালেদা বলেন, “তাহলে এটায় কী প্রমাণ হয়? তিনি কি দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত? নয়।”

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় শেখ হাসিনার বিদেশ যাওয়ার প্রসঙ্গ ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন বলল, তারপরই তো তিনি গেলেন দেশে ছেড়ে। তারপরে তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক নাটক করে আবার আসল।

“আমাকেও দেশের বাইরে চলে যেতে ওরা বলেছিল। আজকে যদি আমরা চলে যেতাম দেশের বাইরে, সবই আল্লাহর ইচ্ছা। তাহলে আমরা বড় ছেলেটাও (তারেক রহমান) ভালো থাকত, আমার ছোট ছেলেটাকেও আমি হারাতাম না।”

“আমি কিন্তু দেশে ছেড়ে যাইনি, দেশের মানুষকে ছেড়ে যাইনি। আমি বলেছি, এই দেশ আমার, এই দেশের মাটি ছেড়ে আমি যাব না। আল্লাহর ইচ্ছা দেখেন, মইন-ফখরুদ্দীন দেশে ছেড়ে পালিয়েছে,” বলেন খালেদা।

বৃহস্পতিবার দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজিরার সময় হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া

বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, “এই আওয়ামী লীগ বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। এখন দরিদ্র মানুষের সবচেয়ে নিম্নমানে মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা।

“পত্রিকায় দেখলাম বিনা টেন্ডারে চাল আমদানি করা হচ্ছে। সেই চাল আমদানি করে কি গরিব মানুষকে কম মূল্যে দেওয়া হবে, না কি চালের অর্ধেক টাকা পকেটে যাবে?”

“বাকি টাকা যাবে আওয়ামী লীগওয়ালাদের পেটে কিংবা তারা সেই টাকা পাচার করবে। লুট করা অর্থ নিরাপদে রাখার জন্য ক্ষমতাসীনরা বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত।”

বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণে শাখার আয়োজনে এই ইফতার অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর সামনে বক্তব্য রাখেন খালেদা।

অনুষ্ঠানে মূল মঞ্চে তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।

বিএনপি নেতাদের মধ্য উপস্থিত ছিলেন এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তাহসিনা রুশদীর লুনা, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এম এ মালেক, মীর সরফত আলী সপু, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতানা সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল।

মহানগর নেতাদের মধ্যে ছিলেন শামসুল হুদা, ইউনুস মৃধা, মীর হোসেন মীরু, নাসিমা আখতার কল্পনা, সাজ্জাদ জহির, মোশাররফ হোসেন খোকন, মো. মোহন, জয়নাল আবেদীন রতন, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আনম সাইফুল ইসলাম, শেখ রবিউল আলম রবি, সাইফুল ইসলাম পটু, রফিকুল ইসলাম রাসেল, সাইদুর রহমান মিন্টু, আবদুল হাই পল্লব, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, আহসানউল্লাহ হাসান, এজিএম শামসুল হক, খন্দকার জিল্লুর রহমান।