পাহাড়ে দুর্যোগের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন বিএনপির

চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসে শতাধিক প্রাণহানির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সুইডেন সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2017, 10:51 AM
Updated : 14 June 2017, 10:55 AM

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহসচিব রুহুল কবির রিজভী বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানে পাহাড় ধসে মাটিচাপায় মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এত বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে লাশের সংখ্যা যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তখন সরকার প্রধান ভ্রূক্ষেপহীন, নিরুদ্বেগে আনন্দ ভ্রমণে সুইডেন সফরে বেরিয়েছেন।

“কোনো দুর্যোগ হলে সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরা বিদেশ সফর বাতিল করে নিজ দেশে উপদ্রুত মানুষের পাশে দাঁড়ান। অবশ্য বিপদের সময়ে নিজ দেশের জনগণকে ফেলে চলে যাওয়ার ঐতিহ্য ও ইতিহাস আওয়ামী লীগের আছে। একাত্তর সালেও আওয়ামী লীগ সেই ঐতিহ্য রক্ষা করেছে। ওয়ান-ইলেভেনের সময়েও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেই ট্রাডিশন রক্ষা করেছেন।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সুইডেনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। ইউরোপের দেশটিতে বাংলাদেশের কোনো সরকার প্রধানের এটাই প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর। সুইডেনের পথে শেখ হাসিনা লন্ডনে যাত্রা বিরতি করে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে পুনর্নির্বাচিত ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিকীকেও দেখে আসছেন।

সুইডেনের পথে লন্ডনে যাত্রাবিরতিতে ব্রিটেনের এমপি পদে পুনঃনির্বাচিত ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক ও বোন শেখ রেহানার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রীর সুইডেন সফরের কোনো ‘কূটনৈতিক তাৎপর্য নেই’ বলে মনে করেন বিএনপি নেতা রিজভী।

“দেশের শোক সঙ্কটে অযৌক্তিক বিদেশ ভ্রমণ হবুচন্দ্র রাজার কীর্তিকলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই দুর্যোগের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপদ্রুত মানুষ, বিধ্বস্ত জনপদ ও অসংখ্য লাশকে উপহাস করার শামিল বলে আমরা মনে করি।”

এই প্রসঙ্গে ২০০৪ সালে জেএমবির বোমাহামলার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চীন সফর বাতিলের কথা বলেন রিজভী।

“আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে চীন সফরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সেই সময়ে ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল। তিনি সফর বাতিল করে দেশে ফিরে এসেছিলেন।”

রুহুল কবির রিজভী (ফাইল ছবি)

শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বিদেশ সফরগুলোর সমালোচনাও করেন রিজভী। 

“বিদেশের যে সমস্ত কনফারেন্সে সচিব পর্যায়ের বা প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ে ব্যক্তি যাওয়ার কথা সেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত হচ্ছেন।”

পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের জন্য সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা বলেন, “পার্বত্য জেলাগুলোতে অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। যদি সত্যিকার অর্থে সেখানে টেকসই উন্নয়ন হত, তাহলে এত মানুষের জীবন যেত না।”

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো এড়িয়ে রাস্তা-ঘাট ও বসতি তৈরি হলে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি এড়ানো যেত বলে মনে করেন বিএনপি নেতা।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, “উন্নয়ন শুধু কয়েকটা ফ্লাইওভার আর রাস্তা-ঘাট নয়। উন্নয়ন হচ্ছে একটা সামগ্রিক বিষয়। শেখ হাসিনার প্রশাসন যেমন যেমন অকর্মণ্য তেমনি দুর্নীতিগ্রস্ত।”

ভূমিধসে অচল চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক

স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষজন পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পাহাড়ে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার বিতরণের ঘোষণা দেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশও দেন তিনি।   

সেনাবাহিনীর চার সদস্যসহ ব্যাপক মানুষের হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদেরও অসহায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।  

নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর সঙ্গে ছিলেন আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।