সড়ক বেহাল বলেই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি: খালেদা

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জন্য সরকারকেই দায়ী করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 02:52 PM
Updated : 13 June 2017, 03:21 PM

মহাসড়কগুলো ‘ভালো আছে’ বলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দাবি করে আসার মধ্যেই মঙ্গলবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে ভিন্ন বক্তব্য আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদার।

তিনি বলেন, “সারাদেশেই এখন দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। বিশেষ করে হাইওয়ের যে বেহাল অবস্থা, ছবি পত্র-পত্রিকায় আপনারা দেখেছেন। হাইওয়ের যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে দূর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়বে।

“এই সরকারের আমলেই আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি মৃত্যু আর মৃত্যু, মৃত্যুর মিছিল বেড়ে চলেছে। অথচ এই সরকার মহা আনন্দে আছে। তারা দেশে বিদেশে ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন, তারা আকাশে উড়েন, তারা মাটির কথা চিন্তাও করেন না, মাটির দিকে দেখেনও না, কী অবস্থায় আছে দেশ।”

মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বিষয়ে ‘অতিরঞ্জিত’ তথ্য দেওয়ার অভিযোগও করে আসছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ২ হাজার ৫৬৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৬৩ জন নিহত হয়েছেন।

সরকার উন্নয়নের কথা বললেও সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা তার সঙ্গে মেলে না বলে দাবি করেন খালেদা।

তিনি বলেন, “তারা অনেক উন্নয়নের কথা বলে, কিন্তু রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা, গ্রামে-গঞ্জের রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা, সেটা দেখে কী বোঝা যায় উন্নয়ন হয়েছে দেশে?

“যদি উন্নয়নের সুফল পৌঁছত তাহলে দেশের মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেত, ভালোভাবে থাকত, শান্তিতে থাকত, আনন্দে থাকত।”

পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করে আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।

রোজায় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সরকারের বিরুদ্ধে বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ করেন তিনি।

খালেদা বলেন, “এ্ই সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তাও করে না। তারা জানে তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। ক্ষমতায় থাকার কতগুলো কৌশল ঠিক করেছে তারা। যাদেরকে হাতে রাখা দরকার তাদেরকে অবাধ সুযোগ দিচ্ছে, বলছে, ‘নিজেরা করো’।

“নির্বাচনে জেতা যাদের নিয়ে সম্ভব, যারা তাদের জিতিয়ে দিতে পারবেন, তাদের জন্য কাজ করছে সরকার। সাধারণ মানুষের ভোটের কোনো দাম নেই।”

গত ১০ বছর বাংলাদেশে কোনো ‘ভোট হয়নি’ দাবি করে তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণের ক্ষেত্র প্রস্তুতের আহ্বান জানান।

“সেই ব্যবস্থা রাখার জন্য প্রয়োজন একটা নির্বাচনকালীন সরকার। কারণ হাসিনা সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে চায় না। সেজন্য দেখেন, আজকে জনগণের এত দূঃখ-দুর্দশা, তাদের কিন্তু কোনো চিন্তা নেই।”

“নিজেরা ভালো আছে, খাচ্ছে, আরও যতটুকু রিলিফ আছে রিলিফ চুরি করছে, লুটপাট করছে, ব্যাংকের টাকা নিচ্ছে। এবার বাজেটে যত রকমের কর বসিয়েছে, ভ্যাট বসিয়েছে এবং মুদির দোকানেও ভ্যাট বসিয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?”

এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে খালেদা জিয়া বলেন, “যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম কী দেশের এই অবস্থা দেখতে? এক পরিবার সমস্ত কিছু দখল করে নেবে, কেউ গণভবন দখল করে নেবে, অমুক বাড়ি দখল করবে, তমুক করবে….। তাদের সব নিরাপত্তা দিতে হবে। শুধু তারাই নিরাপত্তা পাবে, সাধারণ মানুষের কোনো নিরাপত্তা নাই।

“গুম-খুন হচ্ছে, যাকে তাকে গুম করে নিয়ে যাচ্ছে। আজকে মানুষ পরিবর্তন চায়, এদেশের মানুষ আজকে জালেমদের কাছ থেকে মুক্তি চায়।”

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে জোট শরিক দল লেবার পার্টির ইফতার অনুষ্ঠানে আহ্বান জানান তিনি।

গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারের এই ইফতার অনুষ্ঠানে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও ছিলেন এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতের আবদুল হালিম, জাগপার রেহানা প্রধান, এনডিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মূর্তজা, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, বিজেপির আবদুল মতিন সউদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, খেলাফত মজলিশের শেখ গোলাম আজগর প্রমুখ।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন সেলিমা রহমান, শাহজাহান ওমর, মীর মো. নাছিরউদ্দিন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, রুহুল আলম চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তাবিথ আউয়াল, রফিক শিকদার।

লেবার পার্টির নেতাদের মধ্যে ছিলেন ফরিদউদ্দিন, ফারুক রহমান, এমদাদুল হক চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম রাজু, মাহবুবুর রহমান, শামসুদ্দিন পারভেজ, উম্মে হাবিবা রহমান, মহসিন ভুঁইয়া, আবদুর রাজ্জাক রাজু, আহসান হাবিব ইমরোজ, শামিমা চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আমিনুল ইসলাম, এসএম ইউসুফ।