আ. লীগ বুঝেছে যে ভোটে তারা হারবে: খালেদা

আওয়ামী লীগ জরিপ চালিয়ে নিজেদের হার আঁচ করতে পেরে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বাদ দিতে চাইছে বলে দাবি করেছেন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2017, 03:26 PM
Updated : 11 June 2017, 03:28 PM

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপির চেয়ারপারসন রোববার এক ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই দাবি করেন।

তিনি বলেন, “তারা চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি নির্বাচনে এলে তাদের যে কী পরিণতি হবে, তারা গোপন খবর নিয়ে জেনে গেছে। তাদের অবস্থান কত নিচে, সেটা তারা বুঝে গেছে।

“সেজন্যই তারা নানাভাবে হয়রানি করছে, যাতে বিএনপি নির্বাচন না আসে, বিএনপির লোকজনকে কিভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায়।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। এবারও তারা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় নির্বাচন করতে নারাজ।

তবে তাদের দাবিতে সাড়া না দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, ভোট শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে রেখেই হবে, সেক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে না এলে তারাই ভুল করবে।

খালেদা জিয়া বলেন, “আমি সুস্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, বিএনপিকে বাদ দিয়ে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। এদেশে নির্বাচন হবে সহায়ক সরকারের অধীনে, হাসিনার অধীনে নয়।”

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলেও আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

যুক্তরাজ্যে সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আপনারা দেখেছেন ব্রিটেনে নির্বাচন হয়ে গেছে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে) তো ভয় পাননি, তিনি নির্বাচন দিয়েছেন। অথচ তিনি এবার কিছু কম পেয়েছেন সিট। তারপরও তিনি সাহস করে দিয়েছেন।আজকে আওয়ামী লীগের যদি সামান্যতম সাহস থাকে…

“কত অপকর্ম তারা ১০ বছরে করেছে এর হিসাব বিএনপি যদি ছেড়েও দেয়, জনগণের কাছে প্রতিটি জিনিসের হিসাব আছে।”

আওয়ামী লীগের উদ্দেশেখালেদা জিয়া বলেন, “আমি বলছি, এই কয়েকটা মাস আছে। যত পারেন লুটে নেন- আপনাদের জেনারেল সেক্রেটারি(ওবায়দুল কাদের) যেভাবে বলছেন, যা পারেন লুটে নেন। বিদেশে যান নাহলে আর বেশি সময় পাবেন না। এখন সময় চলে যাওয়ার।”

ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে লুটপাট-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “এই ১০ বছরে তারা যত লুট করেছে, যত খেয়েছে, তাদের একেক জনের এত ওজন বেড়েছে যে, গাড়িও তাদের টানতে পারবে কিনা, জানি না।

“এরা জানে নির্বাচন করা তো দূরের কথা, তারা পালাবার সময় তো পাবে না, এরা বেরুতে পারবে না। সেজন্য তারা একতরফা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। নিজে স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রী তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সব জায়গায় যাচ্ছেন এবং নৌকা প্রতীকে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।”

নিজের ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগ বলে এটা না কি তাদের থেকে নিয়েছি। এরকম ভিশন তাদের নেই, তাদের আছে চুরির চিন্তা। আমাদের ভিশনের চুরির কোনো কথা নেই। কাজেই তাদের ভিশন আর আমাদের ভিশন এক হতে পারে না, আমাদের চিন্তা ও ওদের চিন্তা এক হতে পারে না।”

রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েল কনভেনশন সেন্টারে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন খালেদা।

বিএনপিকে ইফতার অনুষ্ঠানেও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান।

অনুষ্ঠানে মূলমঞ্চে এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানসহ প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সুজাউদ্দিন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামা ওবায়েদ, জয়নুল আবেদীন, শাহ মো. আবু জাফর, হাসানউদ্দিন সরকার, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া অনুষ্ঠানে ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা দলের আবুল হোসেন, মোস্তফা সাহাবুদ্দিন রেজা, মিজানুর রহমান খান, আবদুস সামাদ মোল্লা, আবদুল মান্নান, মালেক খান, আবুল কাশেম, এসএম মোস্তফা কামাল, এইচআর সিদ্দিকী সাজু, কাজী নাসির আহমেদ, আবদুল হাকিম, মোহাম্মদ সাদেক, মতিউর রহমান, কামালউদ্দিন, জোয়াদুর রসুল বাবু, আবদুল মতিন প্রমূখ এই ইফতারে অংশ নেন।