ঈদের পর আন্দোলনের আশায় খালেদা

রোজার ঈদের পর সরকারের ‘জুলুম, অত্যাচারের’ বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্য হবে এবং তাকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনের আশা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2017, 03:13 PM
Updated : 10 June 2017, 05:32 PM

শনিবার ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল পিপপলস পার্টি-এনপিপির ইফতার মাহফিলে বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

খালেদা জিয়া বলেন, “লুটেরাদের রোখার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা মনে করি, রোজার ঈদ শেষ হয়ে গেলে জনগণ আরও ঐক্যবদ্ধ হবে, এই জুলুম-অত্যাচার-অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সাথে মিলে রাস্তায় জনগণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে হবে। সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারলে এদেশের জনগণ শরিক হবে।”

‘সহায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে জোট শরিকদের কর্মসূচির প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি প্রধান বলেন, “আমরা এদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই, যে নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনে হবে। হাসিনা মার্কা নির্বাচন এদেশে আর চলবে না। এদেশের কোনো মানুষ হাসিনার অধীনে নির্বাচন চায় না।”

সংসদে জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের এক নারী সাংসদের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, “খবরের কাগজে দেখলাম কালকে আওয়ামী লীগের মহিলারা বলেছেন, আমরা নির্বাচন চাই না, আমরা হাসিনাকে ক্ষমতায় চাই। কত আবদার দেখেন, কী রকম অবস্থায় তারা নিয়ে যেতে চায়।

“আমরা হাসিনাকেও চাই, কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মা্ধ্যমে জনগণ যাদের চাইবে তাদের নিয়ে কাজ করতে হবে।”

দিন দিন দেশের অবস্থা খারাপ হচ্ছে দাবি করে বিএনপি নেত্রী বলেন, “জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। গরিব মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেতেও পায় না। এরমধ্যে গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। চাল-ডাল-তেল-লবণ-সবজি সব কিছুর দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতায় বাইরে চলে গেছে। মানুষ একটু শান্তিতে বাঁচার মতো অবস্থায় নেই।”

জনগণ দেশের শান্তি-অগ্রগতি চাইলেও এখন বাংলাদেশে মানুষের অগ্রগতি নেই দাবি করে তিনি বলেন, “আছে শুধু একটা দলের উন্নতি, তাদের কোনো কিছুর সমস্যা নাই, তারা মহা আনন্দে আছে। তারা এভাবেই থাকতে চায়।

“সেজন্য স্বাভাবিকভাবে মানুষ অস্থির হয়ে পড়েছে। রোজার পরে জনগণ নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

নতুন অর্থবছরের বাজেটকে গরিব মারার বাজেট আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, “এই বাজেটে আরও নতুন নতুন কর বসানো হয়েছে, ভ্যাটের পরিধি বাড়ানো হয়েছে, আবার শুল্ক বাড়ানো হয়েছে ব্যাংকে যে টাকা রাখবেন তার ওপর। এক লাখ টাকা থেকে কর কেটে নেবে।”

দেশের এখন যে অবস্থা তা নিয়ে জনগণেরই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই অবস্থায় কি দেশ চলবে? আমরা শুধু হায় হুতাশ করব, আমরা কি না খেয়ে মরব?

“আজকে পুলিশও অত্যাচারিত হচ্ছে, আওয়ামী লীগের লোকজন তাদের ব্যাপকভাবে অত্যাচার করছে। পুলিশ-আনসার-বিজিবিসহ অন্যান্য বাহিনী যারা আছেন, তাদের সকলের চিন্তা করা উচিৎ- এই দেশ কি আমাদের সকলের সামনে শেষ হয়ে যাবে? আর একটা শ্রেণি দেশটাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাবে যে, নিজেরা ফুলে ফেপে বড় হবে। তাদের(আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) ব্যবহার করে তারা দেশ চালাতে থাকবে আর সাধারণ জনগণ গরিব থেকে আরও গরিব হবে, ধ্বংস হবে। স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা দেখুন লেখাপড়া হয় না, দলীয়করণ চলছে। এভাবে চললে দেশ ধবংস হয়ে যাবে।”

‘দেশরক্ষায়’ সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, “জালেমদের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করে, এই লুটেরাদের হাত থেকে দেশটাকে রক্ষা করতে হবে, যারা দেশের কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে গেছে। এখনও যা আছে সেটাও লুটে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। তারা মনে করছে- এবারই শেষ সময়, যত পারো লুটে নাও। সেজন্য তারা লুটে ব্যস্ত। লুটেরাদের রোখার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

খালেদা জিয়া আশা করছেন: “অন্যান্য বাহিনী, যারা আওয়ামী লীগ দ্বারা অত্যাচারিত হচ্ছে, তারা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হবেন জনগণের পেছনে, আমাদের পেছনে।

“তাদের পরিবার পরিজন আছে, তাদেরও বন্ধু-বান্ধব আছেন। তারা হয়ত চাকুরি করে বলে একটু ভালো থাকতে পারে, বন্ধু-বান্ধব যখন পায় তাদের বলতে ছাড়ে না- কী অবস্থায় কী কষ্টের মধ্যে আছে তারা।”

সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে ‘সবাই প্রস্তুত হয়ে আছে’ মন্তব্য করে বিএনপি নেত্রী বলেন, সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে তার দল ভয় পায় না।

“ইনশাল্লাহ, ভয় পাবও না।”

ইফতারে এনপিপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মহাসচিব ‍মুস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খানসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে এলডিপির অলি আহমেদ, সাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয়পার্টির (কাজী জাফর)  মোস্তফা জামাল হায়দার, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, জাগপার রেহানা প্রধান, খোন্দকার লুৎফর রহমান, মুসলিম লীগের এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, বিজেপির আবদুল মতিন সউদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ইসলামিক পার্টির এজাজ হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, খেলাফত মজলিশের মাওলানা আহমেদ আলী কাশেমী, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এনপিপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আ হ ম জহির হোসেন হাকিম, এম অহিদুর রহমান, নজরুল ইসলাম, বেলাল আহমেদ, তোতা মিয়া, আবদুল কালাম আজাদ, মো. ফরিদউদ্দিন ইফতারে ছিলেন।

বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, আবদুস সালাম, তৈমুর আলম খন্দকার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আফরোজা আব্বাস, আনোয়ার হোসাইন, ফরিদা মনি শহীদুল্লাহ, খালেদা ইয়াসমীন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সিকমী ইমাম খান, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ প্রমূখ ইফতারে অংশ নেন।